কৃষি ও প্রকৃতি

সুবিধা বঞ্চিত কৃষকদের আধুনিক করে তুলেছে কম্বাইন হারভেস্টার

উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীতে লকডাউনের সময় শ্রমিক সঙ্কটে ইরি (বোরো) ধান ঘরে তুলতে কৃষকদেরকে দারুণভাবে সহযোগিতা করছে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন। এক সময়ের দুর্লভ আধুনিক এ মেশিন সরকারি প্রণোদনায় এখন কৃষকের দোরগোড়ায়। মেশিনটির ব্যবহার যেমন সাশ্রয়ী, তেমনি ফসল তুলতে সময়ও লাগে কম। ফলে দিন দিন প্রান্তিক কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে সরকারের এই উদ্যোগ।

Advertisement

জানা গেছে, সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় কৃষি উন্নয়ন সহায়তায় জেলার কৃষকদের মাঝে 'কম্বাইন হারভেস্টার’মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে। নোয়াখালীতে এ পর্যন্ত ৫৯টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দেয়া হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. বেলাল হোসেন জানান, এসিআই কোম্পানির প্রস্তুতকৃত 'কম্বাইন হারভেস্টার' মেশিনের ক্রয় মূল্য ২৯ লাখ টাকা। সরকার ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দেয়ায় কৃষক এ মেশিনটি ৩০ শতাংশ মূল্যে মাত্র ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ক্রয় করে নিচ্ছেন। এছাড়া মেটাল কোম্পানির প্রস্তুতকৃত মেশিনের মূল্য ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সরকার ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দেয়ায় কৃষক এটি সাত লাখ ৮০ হাজার টাকায় ক্রয় করতে পারছেন।

জেলা কৃষি প্রকৌশলী শারমিনা নাসরিন জানান, নোয়াখালী জেলায় মোট ৩৭ লাখ ২৭ হাজার ৬৭২ জন জনসংখ্যার মধ্যে কৃষক পরিবারেই আছেন তিন লাখ ৮৯ হাজার ৮৯১ জন। জেলার উপকূলবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর ও সদর উপজেলায় ৭০ শতাংশ প্রণোদনায় কৃষকদের রিপার ও হারভেস্টার মেশিন দেয়া হচ্ছে। বাকি উপজেলার উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন ৫০ শতাংশ প্রণোদনায়। জনসংখ্যার হিসেবে এসব যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত নয়, প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। যার কারণে বাহির থেকে ভাড়া করে মেশিন ও শ্রমিক আনতে হচ্ছে প্রতিদিন।

Advertisement

নোয়াখালীর সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের স্বাবলম্বী কৃষক মোহাম্মদ সোহেল বলেন, আগে ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগতো, শ্রমিকও লাগতো অনেক। আর এখন লকডাউনে শ্রমিক সঙ্কটের সময় আধুনিক এ মেশিন পাওয়ায় অনেক সুবিধা হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জিয়াউল হক মীর বলেন, আমরা প্রান্তিক কৃষকদের জন্য হটলাইন চালু করেছি। শ্রমিক সঙ্কটে যারা ধান কাটতে অসুবিধা হচ্ছে, তাদেরকে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে অল্প সময়ে ধান কাটার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

আবদুল হক নামে এক হারভেস্টার চালক বলেন, এ মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটা ছাড়াও ধান মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দী সব একসাথেই করা সম্ভব। একদিনে এ মেশিন দিয়ে আট একর জমির ধান কাটা যায়। এক একর ধান কাটতে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে। পাশাপাশি এক ঘণ্টায় ডিজেল খরচ হয় আট থেকে ১০ লিটার। এই মেশিন পেয়ে কৃষকরা যেমন খুশি, তেমনি নতুন উদ্যোক্তারাও খুবই আনন্দিত।

নোয়াখালীর সদর উপজেলার কৃষক মোহাম্মদ জামাল (৪০) বলেন, আমার ৯ একর প্রজেক্টের ধান কাটতে অন্যান্য বার অনেক টাকা খরচ হতো, সময়ও লাগতো ১৫-১৬ দিন। কিন্তু বর্তমানে এ মেশিন দিয়ে এক দিনেই ধান কাটা শেষ। আর শুকাতে লাগবে মাত্র দুই দিন। শ্রমিক খরচেরও বিষয় নাই, বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার ভয়ও নাই।

Advertisement

জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, কৃষিকাজের জন্য নোয়াখালীর কৃষকদের মালিকানায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মাড়াইকল ও কয়েক হাজার পাওয়ার টিলার রয়েছে। কৃষি ও কৃষকদের সুবিধার্থে ৫০ থেকে ৭০ ভাগ সরকারি প্রণোদনায় দেয়া ১৩৩টি রিপার ও ৫৯টি কম্বাইন হারভেস্টার দেয়া হয়েছে। চলতি ইরি (বোরো) মৌসুমে কৃষকরা বিভিন্ন জেলা থেকে আরও ৫০টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন ভাড়া এনেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, চাষাবাদে যন্ত্রের ব্যবহারে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে ইরি (বোরো) জমি চাষে কৃষকরা সবকিছু করছেন যন্ত্রপাতিতে। নোয়াখালী জেলায় পর্যাপ্ত পাওয়ার টিলার ও মাড়াইকল রয়েছে। তবে কম্বাইন হারভেস্টার কৃষকদের চাহিদার তুলনায় এখনো কম। পুরো জেলায় শতভাগ ধান মেশিন দিয়ে কাটতে হলে অন্তত দুই হাজার কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের প্রয়োজন।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, জেলায় কৃষি শ্রমিকদের পাশাপাশি আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা চালু হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। মেশিনের সহযোগিতায় স্বল্প সময় ও অল্প খরচে সময়মতো তাদের ধান ঘরে তুলতে পারছে। এজন্য সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রণোদনার ব্যবস্থা করায় কৃষিবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদও জানান তিনি।

এমএমএফ/এমএস