সমুদ্রের ধারে পাথুরে খণ্ড দিয়ে তৈরি বিশালাকার এক রাস্তা। এ যেন পৃথিবীর বাইরের এক সৌন্দর্য! স্থানটি যেমন সুন্দর তেমনই রহস্যে ঘেরা।
Advertisement
অতিপ্রাকৃত শক্তি ছাড়া আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে দর্শনীয় এ স্থানটি না-কি তৈরি করা ছিল অসম্ভব! আর এ কারণেই স্থানটির নাম জায়ান্টস কজওয়ে। এর অর্থ হলো দৈত্যের বিশালাকার বাঁধানো পথ বা রাস্তা।
ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত এ জায়ান্টস কজওয়ে। এটি আয়ারল্যান্ডের অ্যানট্রিমের উত্তরভাগস্থ সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত। বাসমিল শহরের ৪.৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এর অবস্থান।
প্রায় ৪০ হাজার হেক্সাগোনাল পাথরের বিশালাকার সব কলাম দিয়ে তৈরি হয়ে। প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছে রাস্তা বা রাস্তার পাশের দালান। এ দালানগুলো অনেকটা সাওপাওলো শহরের মতোই দেখা যায়।
Advertisement
অবাক হওয়া মতো স্থান এটি। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও রহস্যময় স্থান হিসেবেও বিবেচিত এটি। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা জায়ান্টস কজওয়েতে ঘুরতে আসেন।
সেখানকার পড়ন্ত বিকেলের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। সমুদ্রপাড়ের পাথুরে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সূর্যাস্ত দেখার সৌভাগ্য সেখানে না গেলে মিলবে না।
১৯৮৬ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ড সরকার এটিকে জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৮৭ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে।
জায়ান্ট কাজওয়ে নিয়ে নানা গল্পের প্রচলন আছে। কারো কারো মতে, দৈত্যদের এক বংশ স্টাফাতে যাওয়ার জন্য চলাচলের পথ হিসেবে এ পথ তৈরি করেছিল। স্টাফাতেও এ রকম একটি বাঁধানো পথ আছে।
Advertisement
আবার কারো মতে, দুটি দৈত্যের মধ্যে লড়াইয়ের ফলে স্থানীয় জায়ান্টস গ্রেভ নির্মিত হয়। আবার অনেকেই মনে করেন, আয়ারল্যান্ডের জায়ান্ট ফিন ম্যাককোল স্কটল্যান্ডের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য যখন স্কটল্যান্ড যাচ্ছিলেন কখন এই পথটি তৈরি করেন।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুসারে, প্রায় ৬০ মিলিয়ন বছর আগে অ্যানট্রিম আগ্নেয়গিরি অঞ্চলের মধ্যভাগে অবস্থিত ছিল। স্কটল্যান্ডের দ্বীপপুঞ্জ, আইসল্যান্ড এবং গ্রিনল্যান্ডের পূর্ব-উপকূলও এ আগ্নেয়গিরি অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তরল লাভার পাতলা স্তর এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। শীতল হওয়ার পরপরই ওই তরল লাভা ঘনীভূত হয়ে পাথরের ন্যায় আকার ধারণ করে। লাভা শীতল হওয়ার মাত্রা একই রকম থাকায় পাথরগুলোতে ফাটলের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ভগ্নাংশগুলো ষড়ভুজাকৃতি স্তম্ভে পরিণত হয়।
যেহেতু লাভা শীতল হয়ে গভীরতর দিকে বিস্তৃত হয়। অতএব এই ষড়ভুজাকৃতির ফাটলগুলোও নিচের দিকে বিস্তৃত হয় এবং এভাবেই বিরাট আকারের স্তম্ভের সৃষ্টি হয়। জায়ান্টস কজওয়ের পাথরের স্তম্ভগুলো অভ্যন্তরীণ চাপে লাভার দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে।
স্তম্ভগুলোর উচ্চতা বিভিন্ন রকম কোথাও ১২ মিটার আবার কোথাও এর উচ্চতা অনেক কম। স্তম্ভগুলো প্রস্থে ১৫ থেকে ২০ ইঞ্চি ব্যাসের এবং উচ্চতায় ৯ মিটার। এদের মধ্যে প্রায় সবই ষড়ভুজাকার, কেবল কিছু পঞ্চ ও সপ্তভুজাকার স্তম্ভ রয়েছে।
কোনো স্থানে বাঁধানো পথের প্রস্থ হলো ৪০ ফুট এবং সবচেয়ে সংকীর্ণ স্থানে এর উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। পাথরের গুহাটি সমুদ্রের মধ্যে প্রায় ১৮৩ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এর বাঁধানো পথটি ৩২ হাজার ঘনমিটার স্তম্ভের সমষ্টি।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান/ইউনেস্কো
জেএমএস/জিকেএস