ইকবাল পারভেজ
Advertisement
আমাদের যাপিত জীবনে থাকে সুখ-দুঃখ, প্রেম-অপ্রেম, স্বদেশ-বিদেশ, জীবন-মৃত্যু। কেউ যখন দেশ ছাড়ে, তখন দেশপ্রেম আরও প্রগাঢ় হয়ে ওঠে তার হৃদয়ে। স্বাভাবিকভাবেই নিত্য সাথে থাকা ভালোবাসার মানুষ, পরিবেশ-প্রতিবেশ হারিয়ে হাহাকার করে ওঠে প্রবাসীর মন। প্রবাসে থেকে তার কাছে স্বদেশ হয়ে ওঠে কবিতা।
‘তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে’ কাব্যগ্রন্থের কবি জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়। জীবন-জীবিকার টানে প্রবাসে গেলেও সাহিত্যচর্চায় ভাটা পড়েনি। তার কবিতার অনুষঙ্গে স্থান পায় নদী, মানুষ, মা, বাংলাদেশ, রাজনীতি ও নারী। কবি দূর দেশে থাকলেও তার মন পড়ে থাকে স্বদেশে। তার ভাবনাগুলো কবিতার আশ্রয়ে ভাষা পায়।
বইয়ে পঁয়ত্রিশটি কবিতা স্থান পেয়েছে। ‘নিঃস্ব’ গ্রন্থের প্রথম কবিতা। এ কবিতায় মা, দেশ, প্রিয়তমা থেকে দূরে থেকে কবি বলেন: ‘দেশের মাটি থেকে দূরে থাকলে যেমন হয়শূন্য শূন্য লাগেএকা একা লাগেনিঃস্ব মনে হয় পৃথিবী।’
Advertisement
কবি আপাত বাস করেন অন্যদেশে। কিন্তু নিয়ত বাস করেন বাংলাদেশে। প্রিয় স্বদেশ তাকে দিন-রাত ডাকে। স্বদেশের ধানক্ষেত, মাটি, প্রজাপতি, মায়া-মমতা, প্রেম-ভালোবাসা তিনি নিত্য অনুভব করেন। ‘বাংলাদেশ’ কবিতায় এমন দেশখানির মানচিত্র নিয়ে কবি বাস করেন রুক্ষ্ম মাটির দেশে। এটিই জীবনবাস্তবতা।
নদীকে বহু মানুষ পছন্দ করলেও কবি নদীকে ঘৃণা করেন। এর কারণ মেঘনার ভাঙনে কত মানুষের ভিটা-মাটি গেছে। নদী গিলে নিয়েছে ফসলের জমি, জীবনের স্বপ্ন। একরাশ হতাশায় তাই কবি নদীকে ঘৃণা করছেন। নদীর কাছে প্রত্যাশাও আছে বৈকি! এমন ধারণা থেকে লিখেছেন ‘নদীকে ঘৃণা করি’ কবিতাটি।
জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় রাজনীতি সচেতন। ‘রূপকার’ কবিতায় তিনি বাংলাদেশের রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুকে কবির উপলব্ধি: ‘তিনি ছিলেন সোনার মানুষ/হাসি-ভরা মুখ/তাঁকে দেখলে শত বাঙালির/গর্বে ভরতো বুক।’
জাহাঙ্গীর আলম কবিতায় জটিলতা তৈরি করেন না। তিনি কঠিন বিষয় উপস্থাপন করেন সহজ-সরল শব্দে। এতে তিনি পাঠকের কাছে সহজেই পৌঁছে যাবেন। তার কবিতায় আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার পাই। ‘ভদ্রলোক’ কবিতায় তিনি লিখেছেন: ‘আমার হাসি কান্দে কথা কান্দে এ-বাড়ি ও-বাড়ি’। অর্থাৎ কবি প্রবাসে বসে এ-বাড়ি ও-বাড়ির হাসি-কান্নায় ঘুরে বেড়ান। এ গ্রন্থের নামকবিতাটি দারুণ প্রেমের কবিতা। কবিতায় রয়েছে বিরহও। প্রিয়াহীন জীবনে তাই কবি বলেন, ‘ভীষণ প্রেমজ্বরে ভুগতে থাকি আমি’।
Advertisement
প্রবাসে কবি একা। মাতৃহীন তার সময় কাটে। চির একা মনে হয় কবির। তাই ‘মায়ের ছবি’ কবিতায় তিনি মায়ের একখানা ছবি বুক পকেটে বয়ে বেড়ান। ‘ভালো থাকি’ কবিতায় মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমরা ভালো থাকলেই আমি বড় ভালো থাকি’। মায়ের ভালো থাকা মানেই সন্তানের ভালো থাকা। কবি মৃত্যুচিন্তাও করেন। যখন মানুষ নিজের থাকে না, অন্যেরও থাকে না, তখন শুধু মৃত্যু থাকে বাকি। কবি ‘মৃত্যু’ কবিতায় এমন বিমূর্ত চিন্তায় আচ্ছন্ন বসে আছেন।
‘তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে’ গ্রন্থের কবিতাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কবিতা হলো: ‘পৃথিবী বদলে গেছে’, ‘আমাদের সময়’, ‘পৃথিবী’, ‘শহর’, ‘বড় হচ্ছি’, ‘নারী’ ইত্যাদি।
‘তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে’ গ্রন্থটি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। এটি পাঠে মনে হয়েছে প্রবাসে বসে রচিত একখণ্ড বাংলাদেশ। কবিতাগুলোর ইংরেজি অনুবাদ করেছেন তাবাসসুম ফাইজা। সম্পাদনা করেছেন পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। প্রচ্ছদ করেছেন ইউনুছ নাজিম। তাদের ধন্যবাদ।
‘চৈতন্য প্রকাশন’ থেকে প্রকাশিত বইটির মূল্য লেখা আছে ২২০ টাকা বা পাঁচ ইউএস ডলার। আমি গ্রন্থখানি পাঠে সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
এসইউ/এমকেএইচ