ফিচার

যেভাবে বডি বিল্ডিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন বাঙালি বধূ

বয়স তার ৪৭ বছর। সিক্স প্যাকের অধিকারিনী। বর্তমানে তিনি একজন সেলিব্রিটি ফিটনেস ট্রেনার। তার ক্লায়েন্টের তালিকায় রয়েছে তামান্না, আনুশকা শেঠিসহ অনেকেই। পাশাপাশি তিনি একজন নামকরা ডিজে, পর্বতারোহী ও ফটোগ্রাফার।

Advertisement

বলছি হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা কিরণ ডেমবলার কথা। ৩৩ বছর বয়স পর্যন্ত সাধারণ নারীর মতোই চলছিল তার জীবন। গৃহিণী ও দুই বাচ্চার মা কিরণের দিন কাটত সংসার নিয়েই। তার স্বামী শহরের একটি বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করছিলেন।

এরপর হঠাৎই কিরণ এক দুঃসংবাদ জানতে পারেন। তার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে। ‘আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম এবং আমার স্বামীও। তখন আমার ওজন ছিল ৭৫ কেজি। তখন আমি সংগীত বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছিলাম’বলেন কিরণ।

তিনি আরও বলেন, ‘গানের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল অনেক। সে কারণেই সংগীত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেছি। ইচ্ছে ছিল শিল্পী হব। তবে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পর থেকেই শরীর নিয়ে আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি। তখন শুধু সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাকেই আগলে রেখে শুরু করি শরীরচর্চা।’

Advertisement

আজ ৪৭ বছর বয়সী এই নারী বডিবিল্ডার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন খেতাব পেয়েছেন। কিরণ একজন ফিটনেস প্রশিক্ষক। হায়দ্রাবাদের নারীদের মধ্যে একজন; যিনি সিক্স প্যাকের অধিকারিনী। বুদাপেস্ট ওয়ার্ল্ড বডি বিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এ নারী।

এ ছাড়াও তিনি একজন ডিস্কো জকি (ডিজে) এবং মাউন্টেইনার; যিনি এখনও পর্যন্ত তিনবার মাউন্ট এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে ভ্রমণ করেছেন। তার পেশাগুলোর কথা জেনে নিশ্চয়ই আপনি হাঁপিয়ে উঠেছেন। তবুও গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এসবের মধ্যেই নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন দুই সন্তানের জননী।

তিনি বলেন,‘প্রথম দিকে আমি শুধু শরীরচর্চার প্রতিই নজর দিয়েছিলাম। সিক্স প্যাক তৈরি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। অসুস্থকালীন সময়ের পর ২০০৭ সালে প্রথম আমি বন্ধুদের সঙ্গে একটি ইয়োগা সেন্টারে যোগ দিই। এরপর শরীরচর্চার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করায় এলাকার এক জিমে ভর্তি হই।’

‘অবাক করা বিষয় হলো ৬ মাসের মধ্যে ২৪ কেজি ওজন কমিয়েছিলাম। এরপর আমি জিম ট্রেইনিংয়ের উপর একটি কোর্স করি। অবশেষে ২০০৮ সালে বেগমপেটে আমার নিজস্ব জিম খুলি’ এভাবেই নিজের জার্নি সম্পর্কে জানান কিরণ।

Advertisement

৬ মাসে ২৪ কেজি ওজন কমানোর পর কিরণের বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তার নিজের জিমে তখন ক্লাইন্টের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করে। এরপর অভিনেতা রাম চরণের স্ত্রী অভিনেত্রী উপাসনা কামিনেনির ট্রেনার হিসেবে কাজ শুরু করেন কিরণ।

‘উপাসনা কামিনেনি পরে আমি তামান্নাহ ও আনুশকা শেঠিকে ‘মিরচি’ ও ‘বাহুবলী’ সিনেমার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এরপর আমি একজন সেলিব্রিটি ফিটনেস প্রশিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করি। রাজামৌলি, প্রকাশ রাজ এবং আরও কয়েকজন আমার ক্লায়েন্ট হয়েছেন’বলে জানান কিরণ।

২০১২ সালের দিকে কিরণ সিক্স প্যাক করার সিদ্ধান্ত নেন। তার কথায়, ‘আট মাসের মধ্যে আমি সিক্স প্যাক সম্পন্ন করি। ২০১৩ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড বডি বিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে নারীদের মধ্যে আমিই সরাসরি প্রবেশ করেছিলাম।’

তবে বুদাপেস্টে অনুষ্ঠানের ১৫ দিন আগে এক দুর্ঘটনায় কিরণের পরিবারের ৩জন একসঙ্গে মারা যান। ‘এ ঘটনার কারণে মানসিকভাবে আমি অনেক দুর্বল হয়ে পড়ি। চ্যাম্পিয়নশিপে আমি ষষ্ঠ স্থানে আসি এবং সবচেয়ে সুন্দর শরীরের খেতাবও জিতেছি’ জানান কিরণ

ফিটনেস প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কিরণ বর্তমানে ‘ডিজে বেল’ নামে পরিচিত। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যখন সংগীতে স্নাতকোত্তর করি; তখন ছয় মাসের একটি কোর্সে অংশ নিয়েছিলাম। এরপরই হায়দ্রাবাদে আমি ডিজের প্রথম শো করি।’

বর্তমানে কিরণ পর্বতারোহী ও ফটোগ্রাফি কোর্স করছেন। কিরণ বলেন, ফটোগ্রাফি খুবই কঠিন একটি কাজ। এটি শিখতে এখনো অনেক সময় লাগবে।’ তবে শরীরচর্চার প্রতি কঠোর মনোনিবেশ রয়েছে এ নারীর। তিনি নিজেকে আরও উচ্চমাপের ফিটনেস ট্রেইনার হিসেবে দেখতে চান।

দ্য হিন্দু/হেলথশটস/জেএমএস/জেআইএম