মরিয়ম আক্তার
Advertisement
কবি ও লেখক পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার জন্ম ১০ অক্টোবর ১৯৭৩ সালে কর্ণফুলীর নিবিড় মায়ায় সিক্ত চরণদ্বীপ গ্রামে। লেখালেখির সূচনা শৈশবে ছড়া দিয়ে খেলাঘরের সাহিত্য বাসরে। পেশায় চিকিৎসক হলেও নিয়মিত সাহিত্যচর্চায় নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। সনাতনী বিতর্ক বিষয়ে লেখালেখির সুবাদে বিতর্ক-সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হয় ওঠেন।
সম্প্রতি পড়েছি তার উপন্যাস ‘ঘুমের মধ্যে লীলা আসে’। উপন্যাসটি এক রোমাঞ্চকর কাহিনি নিয়ে লেখা। এর প্রধান চরিত্র হরিৎ নামের এক দুরন্ত যুবক। সে তার স্বপ্নে এ যুবতীর সন্ধান পায়। সত্যিকারার্থে যার কোনো অস্তিত্ব নেই।
স্বপ্নে দেখা মেয়েটির একটা সুন্দর নামও দেয় হরিৎ। লীলা। লেখকের মতে লীলার সৌন্দর্যের বর্ণনা প্রগাঢ়। ‘লীলা নামের মেয়েটি পরী নয় তবে পরীর মতো দেখতে। তার পরীর মতো ডানা নেই। তবে জ্যোৎস্নার দুধ-সাদা রঙের স্রোতে তার ত্বকের দ্যুতি।’
Advertisement
হরিৎ প্রতি রাতে ঘুমের মাঝে লীলার প্রতীক্ষায় থাকতো। ঘুমের ঘোরে লীলা আসতে কখনো দেরী করেনি। লীলার কোমল হাত ধরে হরিৎ বেরিয়ে পড়তো দূর-দূরান্তের ভ্রমণে।
স্বপ্নেই লীলার হাত ধরে হরিৎ বাংলাদেশের কোনো দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করতে বাদ দেয়নি। ভ্রমণে গিয়ে হরিৎ লীলার কাছ থেকে শুনতো ভ্রমণকৃত জায়গার পূর্ব ইতিহাস। যেমন- কক্সবাজারের অন্য নাম প্যানোয়া। যদিও ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামানুযায়ী কক্সবাজার হয়েছে কিন্তু এর প্রাচীন নাম প্যানোয়া।
এভাবে লীলার সাথে রোজ স্বপ্নে হরিৎ ভ্রমণে যেত আর জানতো নানা জায়গার ইতিহাস। হরিতের স্বপ্নে লীলা প্রতিদিনই ধরা দিত। আর তার হাত ধরে হরিৎ চলে যেত কল্পনার রাজ্যে। বাস্তব জগতে বৃষ্টি নামের এক যুবতীও হরিতের জীবনের কোনো অংশে জায়গা করে নেয়। প্রায়ই হরিৎ বৃষ্টির সাথে দেখা করতো। বৃষ্টি মনে মনে হরিৎকে ভালোবাসতো। হরিতেরও বৃষ্টিকে ভালোই লাগতো। বৃষ্টি প্রতীক্ষায় থাকতো কবে সে হরিৎকে ভালোবাসার কথা জানাবে।
বৃষ্টির জন্মদিন। হরিৎ একটি তৈলচিত্র আর একগোছা রক্ত গোলাপ নিয়ে চলে গেল বৃষ্টির জন্মদিনের দাওয়াতে। বৃষ্টিও বাঙালি নারীর রূপে নীল শাড়ি আর সাদা ব্লাউজ পড়ে এসেছে। ভালোই কাটলো সময়টা। যাওয়ার সময় বৃষ্টি হরিতের হাতে একটা খাম ধরিয়ে দেয়। সারাদিন আড্ডা শেষে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে হরিৎ খামটা খোলে। পড়তেই হরিৎ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। চিঠিতে দুলো লাইন লেখা, ‘আপনি একটু বেশিই বোকা। আর আমি এই বোকারামকেই ভালোবাসি। আই লাভ ইউ বোকারাম।’
Advertisement
চিঠিটা পড়ে হরিৎ ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের মাঝেই স্বপ্নের কন্যা লীলার প্রতীক্ষা। ভাবে আজ লীলা এলে বৃষ্টির বোকামোর কথা বলবে। হরিতের প্রতীক্ষার অবসান হয়। লীলার আগমন। তবে আজ স্বাভাবিক নয়। আজ তার পরনে নীল শাড়ি, সাদা ব্লাউজ। ক্রমশ এগিয়ে আসছে হরিতের দিকে। আরও কাছে আসে। ‘আরে! এতো বৃষ্টি! লীলা কই, লীলা?’ বৃষ্টি হরিতের মুখের কাছে চলে আসে। বলে, ‘অ্যাই যে হরিৎ ভাই, আপনি একটা বোকা। এই বোকারামকেই আমি ভালোবাসি। আই লাভ ইউ হরিৎ ভাই।’
হরিতের স্বপ্নের অবসান হয়। ঘামে ভিজে যায়। চারদিকে শুধু অন্ধকার। তবে কি বৃষ্টিই ছিলো লীলা? যে রোজ স্বপ্নে হরিৎকে সঙ্গ দিতো। না-কি লীলারও আলাদা কোনো অস্তিত্ব আছে? যদি উপন্যাসটির লেখককের সন্ধান পেতাম, তবে প্রশ্নটির উত্তর অবশ্যই জেনে নিতাম।
‘ঘুমের মধ্যে লীলা আসে’ উপন্যাসটি পড়তে পড়তে যেন আমিও হরিতের সাথে হারিয়ে যেতাম তার কল্পনার রাজ্যে। নিজেকে যেন লীলার মাঝে খুঁজে পেয়েছি। সত্যিই অসাধারণ লেখকের ভাব প্রকাশের উক্তিগুলো।
লেখক শুধু কাহিনিই রচনা করেননি। তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের পূর্ব ইতিহাস। যেখান থেকে নিঃসন্দেহে যে কেউ তার জ্ঞানের ধারা প্রসারিত করতে পারবেন। যেকোনো পাঠকের মনে স্থান করে নিতে পারবে পীযূষ কান্তির ‘ঘুমের মধ্যে লীলা আসে’।
বই: ঘুমের মধ্যে লীলা আসেলেখক: পীযূষ কান্তি বড়ুয়াপ্রকাশক: দৃষ্টিপ্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১৮মূল্য: ২০০ টাকা
এসইউ/এএসএম