সালাতুল ইশরাক বা ইশরাকের নামাজ। নফল এ নামাজ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে পড়তেন এবং অন্যকে পড়তেও বলতেন। এ নফল নামাজের চমৎকার ফজিলতও বর্ণনা করেছেন তিনি। কী সেই ফজিলত? আর কখন, কত রাকাআত পড়তে হবে এ নামাজ?
Advertisement
সালাতুল ইশরাকইশরাক শব্দের অর্থ হলো আলোকিত হওয়া। সূর্য উঠার পর জগত আলোকিত হয় বলে এ সময় হাদিসে যে নামাজের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, মুহাদ্দিসিনে কেরামগণ তাকে সালাতুল ইশরাক বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এ নামাজ পড়তেন না বরং একটু সময় নিয়ে আদায় করতেন। এ নফল নামাজের ফজিলত বর্ণনায় একাধিক হাদিসে এসেছে-- হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজর নামাজ জামাআতে আদায় করার পর সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত ওখানে বসে বসেই আল্লাহর জিকির করে। তারপর দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে। তার জন্য পূর্ণাঙ্গ হজ ও ওমরার সমান সাওয়াব রয়েছে।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
- হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক নামাজের পর (ধারাবাহিক) আর এক নামাজ; যার মাঝখানে কোনো গোনাহ হয়নি, তা ইল্লিয়্যুন (উচ্চ মর্যাদায়) লেখা হয়।’ (আবু দাউদ)
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়ল। অতপর সূর্য উঠা পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর জিকির করল; অতপর দাঁড়িয়ে দুই রাকাআত নামাজ পড়ল; সে একটি হজ ও ওমরাহ করার সাওয়াব নিয়ে ফিরে গেল।’ (তাবারানি, আত-তারগিব)
Advertisement
- অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সূর্য উঠার আগে আল্লাহর জিকির, তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা আমার কাছে ইসমাঈল বংশের দুইজন গোলাম আজাদ করার চেয়েও অধিক প্রিয়।’ (মুসনাদে আহামদ)সালাতুল ইশরাকের সময়ফজর নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সূর্য উঠার পর এ নামাজ আদায় করতে হয়। কেউ কেউ বলেছেন সূর্য উঠার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর; আবার কেউ কেউ বলেছেন ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর এ নামাজ পড়তে হয়। আর সূর্য এক বর্শা পরিমাণ (দেড় মিটারের মতো) মধ্যাকাশের দিকে উঠা পর্যন্ত এ নামাজের ওয়াক্ত থাকে।
ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়মইশরাক নফল নামাজ। এটি অন্যান্য নামাজের মতোই দুই রাকাআত করে আদায় করতে হয়। ইশরাকের নামাজের জন্য সুস্পষ্ট আলাদা কোনো নিয়ম ও নিয়ত নেই। শুধু ‘আল্লাহু আকবার’ বলে শুরু করা। আর দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত নামাজ পড়া।
ইশরাকের নামাজের সুনির্দিষ্ট রাকাআত সংখ্যারও উল্লেখ না থাকলেও কেউ কেউ দুই রাকাআত থেকে শুরু করে আট রাকাআত পর্যন্ত পড়ে থাকে। আবার কিছু সংখ্যক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, ইশরাকের নামাজ দুই রাকাআত করে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া যায়।
তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত পড়তেন। এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
Advertisement
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ফজরের নামাজের পর সূর্য উঠার ১৫ থেকে ২৫ মিনিট পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও ঘোষিত ফজিলত পেতে এ নফল নামাজের আমল অব্যাহত রাখা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিত ইশরাকের নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। হজ ও ওমরার সাওয়াব লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস