স্বাস্থ্যসেবার বাজারে পৃথিবীজুড়েই বড় নাম ‘অগমেডিক্স’! বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের ইয়ান শাকিল ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা পেলু ট্র্যানের প্রতিষ্ঠান এটি। যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং ডোমিনিকান রিপাবলিকসহ বিশ্বের পাঁচটি দেশে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং সাইট লিডার হিসেবে বাংলাদেশে যোগ দিয়েছেন প্রকৌশলী রাশেদ মুজিব নোমান। দীর্ঘ উনিশ বছরের প্রবাস জীবনের পাঠ চুকিয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশে। কাজ করতে চান দেশের তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে।
Advertisement
সম্প্রতি ক্যারিয়ার ও সফলতা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—
প্রথমেই নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন—রাশেদ মুজিব নোমান: আমার জন্ম ঢাকায়। বুয়েট থেকে পড়াশোনা করে যাই আমেরিকায়, ছিলাম স্থায়ীভাবেই। নর্থ ক্যারোলাইনা ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর আর নিউ ইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে এমবিএ করি৷ এমবিএ শেষের আগে শুরু করি চাকরি। সাউথ ক্যারোলাইনায় থাকা অবস্থায়ই টিচিং অ্যাসিস্টেন্ট ও গবেষণা সহকারীর কাজ করি। পৃথিবীর বড় অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান ‘জেনারেল মোটরস’র প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও সাত বছর পর পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এয়ারক্রাফট কোম্পানির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হই। এখানে কাজ করি ১১ বছর! আমেরিকায় প্রায় বিশ বছরের সময়ে সবই পেয়েছি জীবনের। কিন্তু সব ছেড়ে এলাম একটি স্টার্টআপের বাংলাদেশ প্রধান হয়ে।
অগমেডিক্সের শুরুর গল্পটি বলুন— রাশেদ মুজিব নোমান: একটি ব্যতিক্রম চিন্তা থেকেই অগমেডিক্সের শুরু। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত। গুগল গ্লাসকে ব্যবহার করে স্বাস্থ্যখাতে কীভাবে পরিবর্তন আনা যায়, তা থেকেই অগমেডিক্সের যাত্রা শুরু। আমাদের প্রতিষ্ঠান দুই ধরনের কাজ করে- আমরা নিজেদের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করি, যেটি স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যবহৃত হয়।
Advertisement
পাশাপাশি আমরা বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বিপিও খাতেও কাজ করছি। বর্তমানে পাঁচটি দেশে আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সেদিক থেকে অগমেডিক্সকে একটি স্টার্টআপের পাশাপাশি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিও বলা যায়। আমাদের প্রতিষ্ঠানটির নজর বিপিও ইন্ড্রাস্টিতে। ২০২০ সালেই এ খাতে তৈরি হয়েছে ২৫০ বিলিয়ন ডলারের বাজার!
বাংলাদেশি তরুণদের জন্য অগমেডিক্সে চাকরির কেমন সুযোগ রয়েছে?রাশেদ মুজিব নোমান: আমাদের প্রতিষ্ঠানের সব খাতেই বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ রয়েছে। অগমেডিক্সে যে সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে, তাও বাংলাদেশি প্রকৌশলীদেরই তৈরি বলা যায়। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রায় নব্বইভাগ কাজই করেছেন আমাদের দেশীয় প্রকৌশলীরা। বিপিও খাতে ডকুমেন্টেশন স্পেশালিস্ট বা স্ক্রাইব পদে আমাদের সবচেয়ে বেশি লোকবল প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় আমরা পর্যাপ্ত স্ক্রাইব পাচ্ছি না। যার ফলে কাজগুলো বাংলাদেশিদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
অগমেডিক্সে কাজের যোগ্যতা সম্পর্কে যদি বলতেন— রাশেদ মুজিব নোমান: স্ক্রাইবদের যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে যিনি ডকুমেন্টেশন স্পেশালিস্ট বা স্ক্রাইব হবেন, তার অবশ্যই ইংরেজিতে ভালো দখল থাকতে হবে। লিসেনিং এবং রাইটিংয়ে ভালো হতে হবে। অর্থাৎ বলার চেয়ে ইংরেজি শুনে বুঝতে পারা এবং লেখার দক্ষতা আমাদের বেশি প্রয়োজন। এজন্য ইংরেজিতে দক্ষ যেকোনো বিষয়ের গ্রাজুয়েটদের আমরা খুঁজছি। পাশাপাশি তাদের কম্পিউটারে ইংরেজি টাইপিংয়ে পারদর্শী হতে হবে। কিন্তু এধরনের চাহিদা অনুযায়ী জনবলের বেশ অভাব। তাই এ কয়েকটি বিষয়ে যারা ভালো তাদের আমরা চাকরি প্রদান করতে পারবো।
তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?রাশেদ মুজিব নোমান: তরুণদের জন্যই আমরা কাজ করার সুযোগ বের করছি। প্রথম ধাপে আমরা অনেক স্ক্রাইব নিয়োগ দিতে চাই। পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং, অপারেশন্স, রিক্রুটমেন্ট এবং আইটি অ্যান্ড সাপোর্ট টিমেও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যেকেউ চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটের ক্যারিয়ার পেইজে গিয়ে আবেদন করতে পারেন। অগমেডিক্স বাংলাদেশ টিমের শীর্ষস্থানে অনেক বাংলাদেশি আছেন; যারা অন্তত এক দশক দেশের বাইরে চাকরির পর দেশে ফিরে এসেছেন। আমরা দেশের তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরিতে এবং তাদের দক্ষতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা দক্ষ হয়ে আসুন। আমরা প্রস্তুত আপনাদের জন্য।
Advertisement
এসইউ/জেআইএম