পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির বিভিন্ন আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে ঝরনা। এ ঝরনা দেখতে ছুটে আসেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক। যে পর্যটকরা হাইকিং এবং ট্রেকিং করতে ইচ্ছুক; তারা সময় করে ঘুরে আসতে পারেন দেবতাছড়ি ঝরনা থেকে। রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দেবতাছড়ি পাড়ায় এ ঝরনা। যেমনই নাম, তেমনই সৌন্দর্যে ঘেরা দেবতাছড়ি ঝরনাটি।
Advertisement
রাঙ্গামাটি শহর থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে ঘাগড়া ইউনিয়নে যেতে। এটি রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের কাউখালী উপজেলায় অবস্থিত। ঘাগড়া বাজার থেকে কাপ্তাই যাওয়ার রাস্তায় প্রায় ৩ কিলোমিটার গেলে দেবতাছড়ি এলাকার প্রবেশমুখ। প্রবেশমুখের সামনে রয়েছে একটি দোকান, যা বুইজ্জার (বুড়া) দোকান নামে পরিচিত। দোকানের পাশ দিয়ে নেমে যাওয়া ইটের রাস্তা ধরে যেতে হবে প্রায় আড়াই কিলোমিটার।
যাওয়ার পথে উপভোগ করতে পারবেন পাহাড়ি গ্রাম, গ্রামের সহজ-সরল জীবন-জীবিকা। রাস্তার দুই পাশে ধানের ক্ষেত, প্রায় জায়গায় আবার চোখে পড়বে মাচার নিচে পাহাড়ি ধনিয়া পাতার চাষ। কখনো দেখবেন পাশে বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি ছড়া। এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন পাড়ার প্রায় শেষাংশে। সেখানেও রয়েছে একটি দোকান। দোকানের সামনে রাখতে হবে গাড়ি। এর পরে গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন না। পুরোটাই যেতে হবে হেঁটে। এখান থেকে ঝরনায় যেতে হাইকিং এবং ট্রেকিং করতে হবে।
গাড়ি রেখে দোকানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়া অনুসরণ করে চলতে হবে। চলতে চলতে যতই ভেতরে যাবেন; ততই মুগ্ধ হবেন। চারপাশে বহু শতাব্দি ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শতশত বৃক্ষ আপনাকে স্বাগত জানাবে। দেখতে পাবেন দূরে, বহুদূরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়। চলতে চলতে শুনতে পাবেন পাখি ও ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। সাথে কানে ভেসে আসবে ছড়ার পানি বয়ে যাওয়ার কলরব। এসব পরিবেশ নিমিষেই মনকে আনন্দিত করে তুলবে। কিছুটা সময়ের জন্য হারিয়ে যাবেন এক অজানা গহীনে। শহুরে জীবন থেকে দূরে, বহুদূরে নিজেকে নিরুদ্দেশ করতে একটুও দেরি করবেন না।
Advertisement
এভাবেই ছড়া অনুসরণ করে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় দেড় কিলোমিটার যাওয়ার পর দেখতে পাবেন বিশাল বড় বড় পাথর। এর আগের রাস্তায় বড় পাথর দেখতে পাবেন। কিন্তু এসব পাথর তার চেয়েও বড়। বড় সব পাথর ডিঙিয়ে উপরে উঠতে হবে আপনাকে। পাথর ডিঙিয়ে উপরে উঠতেই চোখে পড়বে বিশাল সবুজে ঘেরা পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছে ঝরনার জল। দেখে যেন মনে হবে এক রূপসী কন্যা তার সবুজ শাড়ির আঁচল ছড়িয়ে দিয়েছে। অপরূপ এ কন্যাকে দেখে তার প্রেমে পড়বেন না, এটি হতেই পারে না। কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনি তার প্রেমে পড়ে যাবেন। নিজেকে উৎসর্গ করে দিতে চাইবেন তার জন্য।
সমস্ত পথ পাড়ি দেওয়ার কষ্ট নিমিষেই দূর হয়ে যাবে; যখনই আপনি গাঁ ভাসিয়ে দেবেন ঝরনার জলে। প্রশান্তি ছড়িয়ে যাবে দেহ ও মনে। সমস্ত দেহ ও মনের বেদনা ক্ষণিকের জন্য দূর হয়ে যাবে ঝরনার কলরবে। তবে ঝর্ণায় যেতে হলে মোটরবাইক নিয়ে যেতে পারলে ভালো। এ ছাড়া শহর থেকে সিএনজি ভাড়া করে যেতে পারবেন। এতে রিজার্ভ সিএনজি নিতে হবে। ভাড়া পড়তে পারে সাতশ থেকে আটশ টাকা।
> আরও পড়ুন-বসন্তে রাঙ্গামাটির পাহাড়ি সৌন্দর্যরাঙ্গামাটিতে বিশেষ পর্যটন অঞ্চলঝুলন্ত সেতুতে ঝুলছে পর্যটন শিল্প!আবার কবে যাব সাজেক ভ্যালি
এসইউ/এএ/এমএস
Advertisement