মানুষের সহজ ও ছোট্ট একটি আমল; কিন্তু দুনিয়া ও পরকালের উপকারিতায় ভরপুর। যাতে রয়েছে ভয়ঙ্কর মৃত্যু থেকে বাঁচার উপায়সহ দুনিয়া ও পরকালের অনেক নেয়ামতের হাতছানি। হাদিসের অনেক বর্ণনানুযায়ী এ আমলটি হলো দান ও সাদকা করা। হাদিসের বর্ণনাগুলো তুলে ধরা হলো-
Advertisement
> ভয়ঙ্কর মৃত্যু থেকে হেফাজতহজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'দান-সাদকাহ আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি কমিয়ে দেয় এবং অপমানজনক মৃত্যু রোধ করে।' (তিরমিজি)
> সম্পদের বরকতহজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান (সম্পদে বরকত) দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।' (বুখারি)
> গোনাহের কাফফারাহজরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন হজরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেবে ফেতনা সম্পর্কিত হাদিস মনে রেখেছ?হজরত হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে বলেছেন, আমি ঠিক সেভাবেই তা স্মরণ রেখেছি।হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে বড় দুঃসাহসী ছিলে; তিনি কিভাবে বলেছেন? (বলতো)-তিনি বলেন, আমি বললাম, (হাদিসটি হলো)-'মানুষ পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশি নিয়ে ফেতনায় পতিত হবে আর নামাজ, দান-সদকা ও নেক কাজ সেই ফেতনা (গোনাহ) মুছে দেবে।' (বুখারি)
Advertisement
> আরশের ছায়া লাভহজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতিত কোনো ছায়া থাকবে না, সে দিন আল্লাহ তাআলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। (তাহলো)-- ন্যায়পরায়ণ শাসক- যে যুবক আল্লাহর ইবাদতের ভিতর বেড়ে উঠেছে- যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের সঙ্গে থাকে- আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে যে দুব্যক্তি পরষ্পর মহব্বত রাখে, উভয়ে একত্রিত হয় সেই মহব্বতের উপর আর পৃথকও হয় সেই মহব্বতের উপর- এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (অবৈধ মিলনের জন্য) আহবান জানিয়েছে। তখন সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি- যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে দান-সদকা করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না- যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাতে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।' (বুখারি)
> জান্নাতের বিশেষ দরজা লাভহজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় (দান-সাদকাহ) করবে তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ হতে ডাকা হবে, হে আল্লাহ্র বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব যে সালাত আদায়কারী, তাকে সলাতের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে মুজাহিদ, তাকে জেহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে রোজা পালনকারী, তাকে রাইয়্যান দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সদাকাহ দানকারী, তাকে সদাকাহ্র দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার জন্য আমার বাবা-মা কুরবান হোক, সব দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, 'হ্যাঁ', আমি আশা করি তুমি তাদের মধ্যে হবে।' (বুখারি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি দান সাদকাহ করার তাওফিক দান করুন। দান-সাদকাহর মাধ্যমে ভয়ংকর ও অপমানজনক মৃত্যু থেকে বেঁচে থাকাসহ উল্লেখিত নেয়ামত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর
Advertisement