মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ জীবনে সব ধর্ম বর্ণ ও গোত্রের মানুষই এক সঙ্গে বসবাস করে। তাই কোনো মুসলিম ব্যক্তির প্রতিবেশি যদি অমুসলিম হয়, তার অধিকারের প্রতিও খেয়াল রাখা জরুরি। এটিও প্রতিবেশীর হকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলার ঘোষণা-‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেননি। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ৮)
Advertisement
তাই কোনোভাবেই অমুসলিম প্রতিবেশির অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ বা জুলুম করা যাবে না। আবার কোনো অমুসলিম প্রতিবেশি অসুস্থ হলে তার সেবা করাও ইসলামে নিষেধ নয়। কোনো অমুসলিমের প্রতি জুলুম করার অধিকার বা অনুমতি ইসলাম কাউকেই দেয়নি। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো ওপর জুলুম করতে নিষেধ করেছেন, যদিও মজলুম অমুসলিম হয়। তিনি বলেন, ‘তোমরা মজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থেকো, যদিও সে কাফির হয়। তার মাঝখানে আর আল্লাহর মাঝখানে কোনো পর্দা থাকে না। অর্থাৎ তার বদদোয়াও দ্রুত কবুল হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ)
বিভিন্ন সময় এমন অনেক প্রশ্ন শুনতে হয় যে, অমুসলিম প্রতিবেশি যদি অসুস্থ হয় তবে তাকে দেখতে যাওয়া বা তার সেবা করা যাবে কিনা? হ্যাঁ, অমুসলিম প্রতিবেশি যদি অসুস্থ হয় তবে তাকে সহযোগিতা করা বা সেবা-যত্ন করায় ইসলামে কোনো বাঁধা নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অমুসলিম অসুস্থ প্রতিবেশিকে দেখতে গেছেন মর্মে হাদিসেই এর প্রমাণ রয়েছে।
অমুসলিম রোগীকে দেখতে যাওয়াও সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অমুসলিম রোগীদের দেখতে যেতেন এবং তাদের ঈমানের দাওয়াত দিতেন। তাদের সেবা করতেন। হাদিসে এসেছে-
Advertisement
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন এক ইয়াহুদি গোলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমত করত। যখন সে অসুস্থ হলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন, তার মাথার দিকে বসলেন আর তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো! তখন সে তার পিতার দিকে দেখল। পিতা বললেন, তুমি আবুল কাসেমের অনুসরণ করো। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বলে বের হলেন- আল্লাহর শুকরিয়া যে, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (বুখারি)
সুতরাং কোনো অমুসলিম প্রতিবেশি যদি অসুস্থ হয় বা বিপদাপদে পড়ে তবে তার সেবা-যত্ন বা সুস্থতায় কিংবা সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়া প্রত্যেক প্রতিবেশির নৈতিক দায়িত্ব। অসুস্থতার সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাই ইসলামের সুমহান শিক্ষা।
তাই কোনো অমুসলিম প্রতিবেশি অসুস্থ হলে কিংবা বিপদে পড়লে তাকে দেখতে যাওয়া, তার সেবা-যত্ন করার কেউ না থাকলে তাকে সেবা করা ইসলামে নিষেধ নয়। বরং শরিয়তের হুকুম রক্ষা করে, পর্দার হুকুম থাকলে তা মেনেই অমুসলিম প্রতিবেশি, অসুস্থ ব্যক্তি কিংবা বিপদে পড়া প্রতিবেশির সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
বর্তমান মহামারি করোনা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের এ কঠিন সময়ে প্রত্যেককেই সেবার মানসিকতা ও সহযোগিতার মানসিকতা পোষণ করা জরুরি।
Advertisement
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেকের নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। মহামারি করোনা থেকে পুরো বিশ্বকে হেফাজত করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম