দীর্ঘ ৬৮ বছর পর এই প্রথম নিজস্ব মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উৎযাপন করছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল গারাতির হুদুপাড়ার সনাতন ধর্মালম্বী বাসিন্দারা। সনাতন ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ এই উৎসব উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এবার নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব পালন করতে পেরে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন হিন্দু ধর্মালম্বী বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা। জানা গেছে, সনাতন ধর্মালম্বী অধ্যুষিত এলাকা পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল গারাতির হুদুপাড়া। সরেজমিনে ছিটমহলে গিয়ে জানা গেছে, এখানে দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে শারদীয় দুর্গাপূজার কোনো উৎসব ছিল না। নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত ছিটমহলের অধিবাসীরা দীর্ঘদিন থেকেই নানা কারণে অবহেলিত ছিলেন। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন বাংলাদেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে গিয়ে দুর্গাপূজা উৎযাপন করতো। কিন্তু ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তাবায়নের পর তাদের দিন বদলে গেছে। প্রথমবারের মত এবার জেলার বিভিন্ন ছিটমহলে নিজেদের মত করে মণ্ডপ বানিয়ে পূজা করছেন বিলুপ্ত ছিটমহলের সনাতন ধর্মালম্বীরা। এই উপলক্ষে চমকপ্রদ পূজামণ্ডপ ছাড়াও মেলা বসেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল গারাতির হুদুপাড়ায়। দীর্ঘদিন পর পূজামণ্ডপ করতে পারায় দুর্গাপূজা পালনে স্থানীয় সনাতন ধর্মালম্বীদের আত্মীয়-স্বজনরাও এসেছেন ছিটমহলের হুদুপাড়ায়। মেলায় পরিবার পরিজন নিয়ে উৎসবে মেতে উঠেছেন ছিটমহলের সকল ধর্মের মানুষ।বিলুপ্ত গারাতি ছিটমহলের হুদুপাড়া গ্রামের বিজয় বর্মণের মেয়ে শেফালি রায় বলেন, আমি ছোট থেকে ছিটমহলে মানুষ হয়েছি। আমাদের এখানে কখনো দুর্গাপূজার মণ্ডপ হয়নি। তিন বছর আগে তেঁতুলিয়ায় আমার বিয়ে হয়েছে। এজন্য তেঁতুলিয়ার স্বামীর বাড়ি থেকে এখানে বাবার বাসায় দুর্গোৎসবে এসেছি। ছোট ছেলেকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে পেরে বেশ ভালো লাগছে।হুদুপাড়া গ্রামের জিতেন্দ্র বর্মণ (৭৮) বলেন, এখানে ৬৮ বছরেও কোনো মন্দির হয়নি। এতদিন আমাদের মনে কোনো শান্তি ছিল না। সেভাবে কখনই শারদীয় দুর্গাপূজা পালন করা হয়নি। এবার নতুন বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উৎযাপন করছি। এজন্য তিনি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। একই এলাকার শুশীল বর্মণ বলেন, পূজামণ্ডপ করার জন্য এবারই প্রথম সরকারি অনুদান পেয়েছি। নিরাপত্তার জন্য সরকার পুলিশ দিয়েছে। তারা দিনরাত এখানেই থাকেন। আমরা বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উৎযাপন করছি।পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, দীর্ঘদিন পর এবারই প্রথম বিলুপ্ত গারাতি ছিটমহলের হুদুপাড়ায় দুর্গাপূজার মণ্ডপ করা হয়েছে। পূজা উপলক্ষে সেখানে মেলাও বসেছে। পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা ছাড়াও ছিটমহলের সনাতন ধর্মালম্বীদের নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। জেলার অন্যসব পূজামণ্ডপের মত বিলুপ্ত ছিটমহলের সনাতন ধর্মালম্বীরাও যাতে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উৎযাপন করতে পারে এজন্য প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।সফিকুল আলম/এসএস/পিআর
Advertisement