জাগো জবস

অফিসে আসতে হবে না, বাসায় থাকুন

মো. আমিনুল ইসলাম খান

Advertisement

‘আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার,যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই আগের মতো নেইউত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত।’ ড. হুমায়ুন আজাদ রচিত অসম্ভব সুন্দর কবিতাটিকে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে- ‘করোনাভাইরাসের পর আর কিছুই আগের মতো থাকবে না উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত।’ হ্যাঁ, কারণ বদলে যাবে অর্থনীতি, সমাজ ও বিশ্বব্যবস্থা। এমনকি সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আসবে মানুষের জীবনযাপন ও চিন্তা-ভাবনায়।

থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। কর্মব্যস্ত এ নগরী কোনো এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে হঠাৎ কেমন জানি স্তিমিত হয়ে গেল। পরিবর্তিত এ বন্দিজীবনে নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনে হচ্ছে। যেন দীর্ঘ কর্মজীবনের শেষে একটু অবসরের ফুরসত পেলাম। শত প্রয়োজনেও যে অফিস থেকে ছুটি ‘ম্যানেজ’ করা কষ্টসাধ্য ছিল; সেখান থেকেই এখন শুনতে হচ্ছে, ‘অফিসে আসতে হবে না, বাসায় থাকুন’-কী অদ্ভুত ব্যাপার!

উচ্চবিত্তের জন্য এ অখণ্ড অবসরটুকু হয়তো উষ্ণ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সপরিবারে মুভি দেখা কিংবা অনলাইনে মজার সব খাবার আর কেনাকাটা করার জন্য। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তের জীবন কাটছে পরবর্তী মাসের বেতন পাওয়া না পাওয়ার দোলাচলে। মনের মধ্যে হাজারও চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। ক্রমে ফুরিয়ে আসা চালের বস্তার দিকে বারবার নজর যাচ্ছে। এ বেলার তরকারিটুকু কায়দা করে তুলে রাখতে হচ্ছে ওবেলার জন্য।

Advertisement

যতটা না অভাবের তাড়নায়, তার থেকে ঢের বেশি নিজেকে যত সম্ভব গৃহবন্দি করে রাখার জন্য। যা-ই হোক, পেট তো আর করোনা বুঝবে না। এ জন্যই ক্ষুধার্ত শিশুর ক্ষুধা নিবারণের জন্য চুল বিক্রি করতে হয় মাকে। ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ হয়। কান ধরে উঠবস কিংবা পেছনে লাঠির বাড়ি পড়বে জেনেও এক শ্রেণির মানুষকে খাবারের সন্ধানে বের হতে হয়।

সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয় ঢাকা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, এই অদ্ভুত শহরটার কথা, হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পেলাম ল্যাম্পপোস্টের নিচে নেড়ি কুকুরটার ডাকে। জানি না কোন অজানা আশঙ্কায় ডুকরে কেঁদে উঠলো। দূর থেকে মাইকের আওয়াজ ভেসে এলো ‘সাহরি খাওয়ার সময় হয়েছে- উঠুন, জাগুন, সাহরি খাওয়ার সময় হয়েছে।’

এ পবিত্র মাহে রমজানে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন সবার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন। এ সংকটময় পরিস্থিতি থেকে তিনি আমাদের রক্ষা করুন। আর বিলিয়নিয়ারদের মত আমাদের দেশে যেন গণকবর খুঁড়তে না হয়। আর যারা বিতরণের জন্য দেওয়া সরকারের ত্রাণ আত্মসাৎ করছেন, অধিক মুনাফার আশায় রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন- আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুক।

লেখক: ফার্মাসিস্ট, ভিশন ড্রাগস লিমিটেড।

Advertisement

এসইউ/এমকেএইচ