দেশজুড়ে

ফেলে গেলেন স্ত্রী-সন্তান, দায়িত্ব নিল পুলিশ

আয়-রোজগার কমে যাওয়া আর করোনা আতঙ্কে ভাড়া বাসায় ফেলে চলে গেছেন স্ত্রী ও সন্তান। দীর্ঘ ২৫ দিন পর প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় গ্রামে ফিরলেও বাড়িতে উঠতে দেননি চাচাতো ভাইয়রা। তাড়িয়ে দিলেন চেয়ারম্যান মামাও। অবশেষে ৬৫ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী আশরাফুজ্জামানের দায়িত্ব নেয় ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ।

Advertisement

ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, সাভারে একটি বাসায় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর বসবাস করে আসছিলেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আশরাফুজ্জামান। দুই বছর আগে বাথরুমে পড়ে গিয়ে চলার শক্তি হারান আশরাফুল। হুইল চেয়ারে কোনোমতে চলাফেরা করেন। আয়-রোজগার কমে যাওয়া আর করোনা আতঙ্কে স্ত্রী নাসিমা জামান ও ছেলে মনিরুজ্জামান ওই ভাড়া বাসায় তাকে ফেলে রেখে চলে যান। সেখানেই গত ২৫ দিন একা থাকার পর প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় একটি পিকআপ ভাড়া করে ঝিনাইদহে আসেন আশরাফুজ্জামান।

তবে গ্রামের বাড়ি শৈলকুপার উমেদপুরে গেলে বাড়িতে উঠতে দেননি চাচাতো ভাই ও তাদের ছেলেরা। এমনকি গাড়ি থেকে নামতেও দেননি। কোনো উপায় না পেয়ে মামা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার প্রভাবশালী এক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে গেলে সেখান থেকেও তাড়িয়ে দেন ওই জনপ্রতিনিধি। উপায় না পেয়ে পিকআপ চালক গতকাল বুধবার (১৫এপ্রিল) রাতে ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কের গোয়ালপাড়া বাজার এলাকার রাস্তার পাশে আশরাফুলকে নিয়ে রাত কাটান।

ওসি আরও জানান, সকালে খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের পক্ষ থেকে সদরের ওই জনপ্রতিনিধি ও শৈলকুপায় আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কেউ তাকে গ্রহণ করতে চাননি। পরে পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান তার চিকিৎসার দায়ভার গ্রহণ করেন। থানা থেকে তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

Advertisement

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা. মিথিলা পারভীন বলেন, আশরাফুজ্জামানের করোনার কোনো উপসর্গ নেই। তিনি শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী। আশরাফুজ্জামান যেহেতু ঢাকা থেকে এসেছেন এজন্য তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, কেউ যখন আশরাফুজ্জামানকে গ্রহণ করেনি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তার সমস্ত দায়ভার গ্রহণ করা হয়েছে। যতদিন তার অভিভাবক না পাওয়া যায় ততদিন পুলিশ তার পাশে থাকবে।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এফএ/পিআর

Advertisement