ধর্ম

হে প্রভু! রমজানের আগেই বালা-মুসিবত দূর করে দিন

মহান আল্লাহ তাআলার অপার কৃপায় আর মাত্র ক’দিন পরেই পবিত্র মাহে রমজানে আমরা প্রবেশ করব, ইনশাআল্লাহ। একদিকে আসছে ইবাদতের শ্রেষ্ঠ মৌসুম রমজান। যা একজন মুমিন বান্দার জন্য পরম স্বস্তির প্রতীক।

Advertisement

অপর দিকে প্রাণঘাতী মহামারি ভাইরাস কোভিড-১৯ এর ফলে সমগ্র বিশ্ব এখন আতঙ্কিত। এতে আমাদেরকে আতঙ্কিত না হয়ে স্রষ্টার কাছে নতজানু হয়ে সবিনয় প্রার্থনা করা এবং ধৈর্যধারণ করে ঈমানের ওপর অবিচল থাকা উচিত।

যদিও বিশ্বময় এ মহামারির কারণে স্বাভাবিক জীবন যাপন কষ্টকর হয়ে পড়েছে, তারপরও আমাদেরকে ধৈর্যধারণ করতে হবে। এমন কঠিন পরিস্থিতে দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র মাহে রমজান। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন রমজানকে স্বাগত জানানোর জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

একজন মুমিন মুত্তাকি সে তার ইবাদত-বন্দেগিতে কোনোভাবেই দুর্বলতা দেখায় না। বরং রমজান আসছে বলে তাদের হৃদয় থাকে আনন্দে উদ্বেলিত। আমরা কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ের কষ্টের কথা ভুলে গেছি? তারা ধর্মের জন্য কত কষ্টই না করেছেন। সব ধরনের ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দিনের পর দিন অনাহারে থেকেছেন। তার পরও তারা নামাজ, রোজা ও অন্যান্য পুণ্যকাজ ছেড়ে দেননি।

Advertisement

ওহুদ যুদ্ধের সময় মুসলমানদের ওপর আক্রমণকারীরা কত জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতনই না করেছে, যা বর্ণনাতীত। অপর দিকে আমরা কী দেখতে পাই? মুসলমানদের ক্ষুদ্র দলটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি পরম শ্রদ্ধায় অনুপ্রাণিত হয়ে অতুলনীয় বীরত্ব প্রদর্শন করেছেন। ওহুদের যুদ্ধে হজরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার নিজ শরীর দ্বারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ক্রমাগতভাবে রক্ষা করেই যাচ্ছেন, তার নিজ শরীর থেকে যে অঝরে রক্ত ঝড়ছেন তার কোনো পরওয়া নেই। তিনি তার প্রিয় নেতা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নিক্ষিপ্ত প্রতিটি তীর এবং পাথর নিজের শরীর দ্বারা প্রতিরোধ করছেন।

হজরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর শরীর অসংখ্য আঘাতে জর্জরিত হয়ে যায়, কিন্তু তিনি তার নির্দিষ্ট স্থান থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণও সরে যাননি। তিনি এজন্যই তার স্থান ত্যাগ করেন নি যে, যদি তিনি সামান্য পরিমাণ সরে যান তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরীরের কোনো অংশে শত্রুর ছুঁড়ে মারা তীর এসে আঘাত হানবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিরাপদ রাখতে হজরত তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার শরীরে এত বেশি তীরের আঘাত গ্রহণ করেছিলেন যে, তার একটি হাত চিরদিনের জন্য অকেজো হয়েগিয়েছিল।

ওহুদের ময়দানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরীর আঘাতে জর্জরিত হয়েছিল, তার পবিত্র দাঁতও এতে শহিদ হয়েছিল। তারপরও তিনি তাদের জন্য পরম দয়াময় আল্লাহর কাছে হেদায়াত কামনা করেছেন। ওহুদের ময়দানে তার পবিত্র সাহাবিদেরকে এমন নির্দয়ভাবে আঘাত করে শহিদ করা হয়েছিল যে, তাদের মৃতদেহ পর্যন্ত সনাক্ত করা যায়নি।

Advertisement

এতো কিছু হওয়া সত্বেও কোনো সাহাবি ইসলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ত্যাগ করে চলে যাননি বরং তাদের মনোবল আরো দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছিল। তারা এটা বলেন নি যে, আমরা এই দু:খ-কষ্ট সহ্য করতে পারছি না, তাই ইসলাম ত্যাগ করছি।

সাহাবায়ে কেরামের মনোবল এমন পাহাড়ের ন্যায় ছিল যে, এ পথে নিজ প্রাণ কুরবান করতে তারা সদা প্রস্তুত ছিল। এতো কষ্ট সহ্য করা সত্বেও তারা ঠিকমত নামাজ আদায় করেছেন, রমজানের রোজা রেখেছেন। তারা এটা বলেন নি যে, এই বৈরী অবস্থায় আমাদের জন্য নামাজ ও রোজাকে মাফ করে দেয়া হোক।

একটু ভেবে দেখুন! ইসলামের জন্য, আল্লাহর একত্ববাদের জন্য, আমাদের প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবিরা কত কষ্ট সহ্য করেছেন; সেই তুলনায় আমরা কি এর সামান্য পরিমাণও কষ্ট সহ্য করছি?

আর ক’দিন পরেই পবিত্র মাহে রমজান শুরু হবে, যে মাসের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন মুমিন মুত্তাকি বান্দারা। ইতোমধ্যে তারা রমজানের রোজার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দিয়েছেন। তাদের কাছে রমজান যে সময়েই আসুক না কেন, আর যে মহামারিতেই আসুক না কেন, দুশ্চিন্তার কারণ হয় না বরং তারা পরম আনন্দে রোজাকে স্বাগত জানায়।

কিন্তু যারা দুর্বল ঈমানের অধিকারী তারা রোজার মাস নিয়ে চিন্তিত থাকেন। তারা ভাবেন, এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে যে রোজা রাখবো ভাবতেই যেন কষ্ট হচ্ছে।

এই যে অশেষ কল্যাণের মাস আমরা লাভ করতে যাচ্ছি এ জন্য আল্লাহর কাছে আমাদেরকে এখন থেকেই অনেক বেশি দোয়া করা উচিত। যেহেতু রোজা আল্লাহ তাআলার একটি নেয়ামত, তাই আমরা পবিত্র কুরআনের এই দোয়াটি করতে পারি-رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ

হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমাকে সামর্থ? দাও যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।' (সুরা নামল : আয়াত ১৯)

আসলে রোজা আমাদের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ এক কল্যাণ। এই কল্যাণ থেকে আমাদেরকে পরিপূর্ণ লাভবান হওয়া উচিৎ। আমরা সকাতরে প্রভুর দরবারে দোয়া করি, হে আল্লাহ! করোনাভাইরাস মহামারি থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন এবং আমাদের তাওবা কবুল করে রমজানের আগেই সব বালা-মুসিবত দূর করে দিন। আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

এমএমএস/এমকেএইচ