‘নিরাপত্তার অভাব’ -নামক শব্দ হেলমেটে বন্দী থাকলো অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এই সফরকে বাতিল, স্থগিত যাই বলুক, আসল কথা হচ্ছে এবছর তাঁরা বাংলাদেশে আসছে না। কবে আসবেন, তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। কারণ, অনেক দেশের সঙ্গে আগামী কয়েক বছর সিরিজ খেলার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ সফরের জন্য এখন সময় বের করার কাজটা নতুন করেই করতে হবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে। হয়তো করবেনও। তবে একটা কথা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলার এক দশকেরও বেশি সময় পর খেলবে দ্বিতীয় টেস্ট সিরিজ। অবশ্য এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এতো সেই অস্ট্রেলিয়া, যারা নিউজিল্যান্ড টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ছাব্বিশ বছর পর্যন্ত প্রতিবেশি দেশটির সঙ্গে টেস্ট খেলেনি! কারণ, ছিল কিউইরা আগে টেস্ট খেলা শিখুক! আইসিসি ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর এখন হয়তো সেভাবে সরাসরি অনেক কিছু বলতে পারে না অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড। তবে অনেক কিছু করার জন্য ভারত নামক বড় একটা দেশকে সঙ্গে নিয়ে তারা আইসিসি-কে ‘ঠুটো জগন্নাথ’ বানিয়ে ফেলেছে! মুখে অনেক কিছু তাদের বলতে হয় না। কিছু কাজ কর্মে পরিষ্কার হয়ে যায়, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে চলতে হবে ক্রিকেটের বাকি বিশ্বকে! বাংলাদেশে না আসা অস্ট্রেলিয়ার ওরকম একটা ইচ্ছা-অনিচ্ছার ব্যাপার ছাড়া অন্য কিছু কি?অস্ট্রেলিয়া কেন বাংলাদেশে এলো না এই প্রশ্নের উত্তর অনেকে অনেকভাবে খুঁজছেন। আগামীতেও খুঁজবেন। খুঁজে বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেস কি বের করবে সেটা ভবিষ্যতে জানা যাবে। তবে আপাতত: একটা কথাই বলতে হচ্ছে; নিরাপত্তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান নিরাপত্তা বিষয়ক কর্তাদের তুলে ধরা অনেক কিছুতে হয়তো বিসিবি কর্তারাও খুব বেশি কিছু বলতে পারেননি। কিন্তু দুই অস্ট্রেলিয়ান সাবেক ক্রিকেটার যা বলেছেন তাতে নতুন করে অনেক চিন্তার খোরাক পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম জন ইয়ান চ্যাপেল। চ্যাপেল ভাইদের বড়জন। ক্রিকেট বিশ্বে ঠোঁটকাটা মানুষ হিসেবে পরিচিত। সোজা সাপটা কথা বলতে বেশি পছন্দ করেন। যে কারণে, তাঁকে অপছন্দ করার লোকের সংখ্যাও বেশি। সেটা খোদ অস্ট্রেলিয়াতেও। ইয়ান চ্যাপেল কুইন্স ইংলিশ আর ইংরেজ জড়িত ভদ্রতার কোনো ধার ধারেন না। যা বলার সরাসরি বলে ফেলেন। এরকম বলার অভ্যাস যার তিনি কিন্তু অস্ট্রেলিয়া দলের বাংলাদেশ সফর বাতিলের পরও নিজের কলামে একটা প্রশ্ন তুলেছেন। বাংলাদেশের পরিবর্তে অস্ট্রেলিয়ার সফরটা যদি ভারতে হতো, তারা কি সফর বাতিল করার সাহস দেখাতে পারতো? পারতো কি পারতো না সেটা ভাল বলতে পারেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারা। হ্যাঁ, অস্ট্রেলিয়ান কেন পৃথিবীর যে কোনো দেশের মানুষের কাছে নিরাপত্তা একটা স্পর্শকাতর বিষয়। অস্ট্রেলিয়ানরাও তার থেকে ব্যতিক্রম নয়। বরং বলা যায় একটু বেশি স্পর্শকাতর তাঁরা। অতীতে শ্রীলংকায় বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলতে যায়নি তারা নিরাপত্তা ইস্যুতে। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, ভারতে জঙ্গী হামলার পরও তাঁরা ভারত সফর করেছে। সেটা ক্রিকেটের কারণে নাকি ডলারের টানে বলা যাচ্ছে না। তাই চ্যাপেলের প্রশ্নটা ভাবায় অনেককে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া যে হেলমেট মাথায় রেখেই বাংলাদেশ সফর বাতিল করুক না কেন তাদের এক সাবেক অধিনায়ক কিন্তু ঠিকই বাউন্সারটা ছোঁড়ার সাহস দেখিয়েছেন। তাতে অবশ্য অহেতুক হুক করার চেষ্টা করেননি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কর্তারা। কারণ, তাঁরাও জানেন ইয়ান চ্যাপেল লোকটা লড়িয়ে। কাউকে ছেড়ে কথা বলার লোক নন। তাছাড়া ক্রিকেট বিশ্বে ইয়ান চ্যাপেল নামটাও খুব প্রভাবশালী। অতএব ‘ডাক’ করাই ভাল। তাঁরা করেছেনও তাই। কিন্তু আরেক জন তিনি ইয়ান চ্যাপেলের মতো এতো প্রভাবশালী নন। তবে ডিন জোন্স নামটা ক্রিকেট বিশ্বে খুব অপরিচিত নয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য তিনি। অ্যালেন বর্ডারের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া দলটা যখন পুনর্গঠন করা হচ্ছিলো তখন অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যাটিং লাইনের তারকা তিনি। খেলা ছাড়ার পর কমেন্ট্রি আর কলাম লেখা নিয়ে আছেন ক্রিকেটের সঙ্গে। ক্রিকেট বিশ্বের হাঁড়ির খবর তার জানা। সেই লোকটা কিন্তু তাঁর কলামে লিখেছেন; অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর বাতিলের পেছনে হেরে যাওয়ার ভয়ও একটা ফ্যাক্টর। বাংলাদেশ এই সময় খুব ভাল ক্রিকেট খেলছে। আর ঠিক উল্টো অবস্থা অস্ট্রেলিয়ার। তাছাড়া এই উপমহাদেশের স্পিন সহায়ক উইকেটে অস্ট্রেলিয়ানদের সাফল্যেও হারও খুব একটা ভাল নয়। সে কারণেই ঝুঁকিটা নিতে চায়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। মোদ্দা কথায় এটাই বলতে চেয়েছেন জোন্স। চ্যাপেল-জোন্স-রা ধন্যবাদ পেতে পারেন সত্য খোঁজার সৎসাহস দেখানোর জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ ‘অনিরাপদ’ এই ধুয়ো তুলে অস্ট্রেলিয়া এখানে এসে টেস্ট খেলতে কেন এলো না আগামী প্রজন্মের ক্রিকেট প্রেস নিশ্চয়ই সেই কারণ খোঁজার সাহস দেখাবে।লেখক : স্পোর্টস এডিটর, দীপ্ত টিভি।এইচআর/এমএস
Advertisement