আজ থেকে ১০০ বছর আগে করোনার মতো এমনই এক ভয়ঙ্কর বিদেশি ভাইরাস আক্রমণ করেছিল ভারতবর্ষ। সে সময় কেড়ে নিয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জরাজীর্ণ ভারতবর্ষের বহু মানুষের প্রাণ। সে ভাইরাসের নাম ছিল ‘স্প্যানিশ ফ্লু’। টানা দুই বছর দাপট দেখিয়েছিল ভাইরাসটি।
Advertisement
জানা যায়, ১৯১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ ছড়িয়ে পড়েছিল। এ রোগের লক্ষণ ছিল ভয়ঙ্কর। শুরুতে জ্বর হতো, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। দেহে অক্সিজেনের অভাবে সারা শরীর নীলবর্ণ হয়ে যেত। এরপর শ্বাসযন্ত্রে রক্তে জমে শুরু হতো বমি, সেই সঙ্গে নাক দিয়ে রক্তপাত।
ভাইরাসটি মারাত্মক হয়ে ওঠে ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের ১৩ সপ্তাহে সারাবিশ্বে ভয়াবহ তাণ্ডব চালায়। তখন ভারতবর্ষে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১-২ কোটি মানুষ। দুই ধাপে আক্রান্ত হয় ভারতবর্ষ। এর প্রথম ধাপের প্রভাব ছিল অপেক্ষাকৃত মৃদু। দ্বিতীয় ধাপে ১৯১৮ সালের শেষদিকে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে।
ভাইরাসের উৎপত্তি সম্পর্কে বলা হয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে দেশে ফিরতে থাকা সৈনিকদের হাত ধরেই ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিল এটি। মূলত সারাবিশ্বেই এর প্রভাব পড়েছিল। সংক্রমিত হয়েছিল বিশ্বের ২৭ শতাংশ মানুষ। অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস, ফ্রান্সে অবস্থিত ব্রিটেনের সামরিক ছাউনি, চীনের উত্তরাঞ্চল কিংবা স্পেন থেকে এ মহামারির উৎপত্তি।
Advertisement
আরও বলা হয়, যেহেতু স্পেন যুদ্ধ থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছিল। সে কারণে এর নাম ইচ্ছাকৃতভাবে স্পেনের নামে দেওয়া হয়েছিল। ইতিহাস বলছে, রাজা ত্রয়োদশ আলফানসো এবং তার মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য যখন এ বিশেষ ভাইরাসে সংক্রমিত হন, তখন সে খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম। তাদের কারণে ইউরোপে এ ভাইরাসের কথা প্রথম শোনা যায়। নাম হয়ে যায় ‘স্প্যানিশ ফ্লু’।
তখন করোনার মতোই পরিস্থিতি হয়েছিল বিশ্বজুড়ে। সব ধরনের খেলাধুলা, গণজমায়েত, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আজ ১০০ বছর পরে একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। লক্ষণও প্রায় একই। এখন সতর্কতা আর প্রতিরোধ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আপাতত।
এসইউ/জেআইএম
Advertisement