সৌদি আরবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নামাজের জামাআত ও জুমআর নামাজে অংশগ্রহণ নিয়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় আলেমরা বিশেষ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ২ মার্চ থেকে সাময়িকভাবে পবিত্র ওমরাহ পালনও বন্ধ রেখেছে দেশটি। সম্প্রতি মহামারি করোনার বিস্তার রোধে নামাজের জামাআত ও জুমআয় অংশগ্রহণে আক্রান্তদের ব্যাপারে তিনটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে সৌদির শীর্ষস্থানীয় আলেমরা।
Advertisement
সৌদি আরবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানী রিয়াদের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের ২৪তম বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে এ সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো->> করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা জামাআতে অংশ নেবে না এবং জুমার পরিবর্তে বাড়িতে জোহরের নামাজ আদায় করবে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন, ‘মহামারীতে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ ব্যক্তিদের মাঝে রোগ ছড়াবে না।’ (বুখারি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম আরও বলেছেন, ‘কোনো এলাকায় যখন মহামারি ছড়িয়ে পড়ে তবে বাইরের লোকেরা সে এলাকায় যাবে না এবং ভেতরের লোকেরা সে এলাকা ত্যাগ করবে না।’ (বুখারি, মুসলিম)
>> কর্তৃপক্ষ যদি কাউকে নিরাপদ স্থানে থাকার নির্দেশ দেন, সেও জুমআ কিংবা নামাজের জামাআতে শামিল হবে না। বরং তার নিরাপদ স্থানে (কোয়ারান্টাইনে) থাকার জায়গায়ই নামাজ পড়ে নেবে। এ প্রসঙ্গে হজরত শারিদ ইবনে সুওয়াইদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য।তিনি বলেন, ‘বনু সাকিফ গোত্রের এক কুষ্টরোগী রাসুলের কাছে বাইয়াত নিতে আসলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তাকে মদিনায় প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি ফিরে যাও। তোমার বাইয়াত গ্রহণ হয়ে গেছে।’ ( মুসলিম)
Advertisement
>> মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য শুক্রবার জুমআর নামাজ এবং অন্যান্য ওয়াক্তে মসজিদে গিয়ে জামাআতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ।
>> যদি কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত দেয় তবে সে তা মেনে চলতে বাধ্য থাকবে। সে জামাআতে নামাজ ও জুমআর নামাজে অংশগ্রহণে মসজিদে যাবে না বরং নিজ বাড়িতে বা পৃথক কোনো জায়গায় নামাজ পড়বে।
>> যদি কেউ আশঙ্কা করে যে তার দ্বারা অন্য কারও ক্ষতি হতে পারে কিংবা সে কারো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে; তবে তার জন্য জুমআর নামাজসহ অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজ জামাআতে পড়া থেকে বিরত থাকার সুযোগ রয়েছে।
ওলামা কাউন্সিলের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা করোনা আক্রান্তদের জুমআর নামাজের পরিবর্তে চার রাকাআত জোহরের ফরজ আদায় করার রায় প্রদান করেন।
Advertisement
সৌদি প্রেস এজেন্সির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অধিবেশনে মহামারি ও তার বিস্তাররোধে জুমআর নামাজের জামাআত ও অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজের জামাআতে অংশগ্রহণ সম্পর্কে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ওলামাদের এ অধিবেশনে ইসলামি শরিয়তের বিধান, উদ্দেশ্য, রীতিনীতি এবং এ বিষয়ে প্রজ্ঞাবান আলেমদের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্তগুলো দেয়া হয়।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে সৃষ্ট করোনাভাইরাস বিশ্বের ১২৪টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ভয়াবহ করোনাভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে। এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের আক্রমণকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পুরো বিশ্ব। ভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বের অনেক মসজিদে জুমআসহ জামাআতে নামাজ আদায় বন্ধ রয়েছে।
কাবা শরিফের মূল মাতআফে বন্ধ রয়েছে তাওয়াফ। মক্কা ও মদিনায় ১৫ মিনিট জুমআ আদায়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এবার তিন নির্দেশনা জারি করল সৌদি আরবের শীর্ষ ওলামা কাউন্সিল।
এমএমএস/জেআইএম