রবিউল আউয়াল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন পালনের মাস হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। যদিও রবিউল আউয়াল মাসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু এ পৃথিবীতে জন্মই নেননি বরং তার বেলাদাত তথা জন্ম, নবুয়ত, হিজরত এবং ওফাত এ মাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে বিশ্বনবির জন্ম উপলক্ষে বছরব্যাপী প্রত্যেক সোমবার রোজা পালন করা সুন্নাতি আমলের একটি।
Advertisement
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসায় এ দিন বা এ মাস আনন্দ উৎসব পালন নয় বরং বছরব্যাপী প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ তথা আদর্শকে ধারণ করাই হলো রবিউল আউয়াল মাসের অন্যতম শিক্ষা।
তবে এ মাসটি মুসলিম উম্মাহকে স্মরণ করে দেয় যে, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ও মুমিনদের জন্য অনুগ্রহসহ আল্লাহর জমিনে তার দ্বীন ও ইসলাম বাস্তবায়নের মহান মিশনকে সামনে রেখে এ পৃথিবীতে আগমন করেছেন।
মানুষকে কল্যাণের পথ দেখাতেই মহান আল্লাহ তাকে নবুয়ত ও রেসালাতের দায়িত্ব দিয়েছেন। নবুয়ত ও রেসালাতের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি অবর্ণনীয় দুঃখ ও কষ্ট করেছেনে। অতিমাত্রায় নির্যাতন ভোগের এক পর্যায়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে তিনি হিজরত করেন। এ রবিউল আউয়াল মাসেই তিনি হিজরত করে মদিনা মুনাওয়ারায় গিয়ে পৌঁছেন।
Advertisement
দ্বীন ও ইসলামের জিম্মাদারি হুবহু পালন শেষে এ পবিত্র মাসেই তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। সুতরাং এ মাস শুধু আনন্দের নয়, বরং এ মাস যেমন সর্বাধিক আনন্দের আবার সর্বাধিক দুঃখের। আর এ মাসের আনন্দ ও দুঃখের মাঝেই রয়েছে মুসলিম উম্মাহর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ গ্রহণের অনুপ্রেরণা।
তবে হ্যাঁ, বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বেলাদাত তথা জন্ম উপলক্ষে বছরব্যাপী নিয়মিত একটি আমল করা যেতে পারে। আর তাহলো প্রতি সোমবার রোজা পালন।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন।’ (তিরমিজি ও নাসাঈ)
সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি সোমবার রোজা রাখেন কেন? তিনি বললেন, এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে। তাই এই দিন রোজা রাখি।
Advertisement
এখনও মদিনা শরিফে ব্যাপকভাবে এই আমল প্রচলিত আছে। প্রতি সোমবার মসজিদে নববিতে ইফতারের বিশেষ আয়োজন করা হয়, যা স্থানীয় জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আয়োজন করে থাকেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্মের দিন সোমবার রোজা রাখতেন। হাদিস বিশারদরা লিখেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের কারণে প্রতি সোমবার রোজা রাখা মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু কাতাদাহ আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবার রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি। ওই দিনই আমি নবুয়ত লাভ করেছি বা আমার ওপর ওহি অবতীর্ণ হয়...।’ (মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ইন্তেকালের তারিখ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও দিনের ব্যাপারে কোনো মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি। আর দিনটি ছিল ‘সোমবার’।
সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মদিন সোমবার। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিনে রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিন (সোমবার) রোজা পালন বেদাআত নয় বরং এ দিন রোজা পালন করা সুন্নাত।
তবে অন্য কারো জন্মদিন উপলক্ষে রোজা পালন করা যাবে না। আর যদি কেউ তার জন্মের দিনে রোজা পালন করে তবে তা বেদাআত হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন (সোমবার) রোজা রাখার কথা বলেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। তাই এ দিন রোজা পালনে কোনো বাধা নেই। বরং এটি সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সোমবার রোজা রাখতেন।
যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার জন্ম গ্রহণ করেছেন, সেহেতু বছরব্যাপী সোমবার রোজা পালন করা সুন্নাতি আমল।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদর্শকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার মাধ্যমে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসায় সোমবার রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর