তানভীর অপু বাংলাদেশের কৃতি সন্তান। একজন ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। পেশাগত জীবনে স্থায়ী কোন চাকরি নেই। নেশায় তিনি পরিব্রাজক। বর্তমানে বসবাস করছেন ফিনল্যান্ডে। সে দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন তিনি। ফিনল্যান্ড থেকেই ভ্রমণের নেশা চেপে বসে। ফলে স্থায়ী কোন চাকরি করা সম্ভব হয় না। মন চাইলে আর পকেটে টাকা থাকলেই বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে।
Advertisement
ছোটবেলা থেকেই তানভীর অপুর অদ্ভুত একটি বাতিক ছিল। টাকা জোগাড় হতেই বেরিয়ে পড়তেন ঘুরতে। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি এ পর্যন্ত ৬৮টি দেশের ৭১৫টি শহর ঘুরেছেন। শুনতে অবাক লাগছে, তাই না? মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এতগুলো শহর ঘোরার মতো টাকা তিনি কোথায় পেলেন? এ প্রশ্নের উত্তরটি সহজ হলেও তার মতো করে দেখানো কঠিন।
তানভীর পরিশ্রম করেন। তিনি খণ্ডকালীন বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হন। কখনো পানশালায়, কখনো জাহাজের রেস্তোরাঁয় কাজ করেছেন। তবে কিছুদিন নিজেই একটি রেস্তোরাঁ খুলে বসেছিলেন। তা-ও একসময় গুটিয়ে নিয়েছেন। কারণ টাকা জোগাড় হলেই বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে। ঘুরতে গিয়ে তিনি আয়েসী জীবন কাটান না। সেখানে সস্তা হোটেলে রাত কাটান, কম দামি খাবার খান, প্রচুর হাঁটেন।
তানভীর অপুর দেখা প্রথম দেশ এস্তোনিয়া। এরপর যান সুইডেন। ২০০৬ সালে শুরু হয় তার যাত্রা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন। তখন ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসেছিল জার্মানিতে। গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন রুস্তভ শহরে। তখন থেকেই ভ্রমণযাত্রা শুরু, এখনো চলছে।
Advertisement
তিনি ভারত, হাঙ্গেরি, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মরক্কো, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, মেসেডোনিয়া, মিসর, নরওয়ে, ফিলিস্তিনসহ ৬৮টি দেশের ৭১৫টি শহর ঘুরেছেন। একেক দেশের মানুষের জীবন, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বৈচিত্র্য জানতেই তিনি মূলত ভ্রমণ করেন।
এত এত শহর ঘোরার পরও সুযোগ পেলেই বাংলাদেশে ছুটে আসেন তানভীর। কারণ বাংলাদেশেই তার শেকড়। ৩৯ বছর বয়সী তানভীরের বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে। মা মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক পদে চাকরি করতেন। বাবা ইব্রাহীম আলী দেওয়ান ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। স্ত্রীর নাম সীমা খান।
তানভীর অপু রাজশাহীতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। এরপর নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিকেএসপির হকি দলের খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। কয়েক বছর ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পক্ষে হকি খেলেছেন। উচ্চমাধ্যমিক শেষে ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক পড়ার সময়েই ২০০৫ সালে চলে যান ফিনল্যান্ডে।
তানভীরের ভ্রমণের মূল লক্ষ্য মানুষের জীবন দর্শন। শুধু দেখাই নয়, মনে-প্রাণে উপলব্ধি করা। জীবন ও শহর নিয়ে তিনি অনেক ছবি তুলেছেন। বাংলাদেশে সেসব ছবির প্রদর্শনীও হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে তার ভ্রমণ বিষয়ক একটি বইও বের হয়েছে।
Advertisement
তানভীর অপু বলেন, ‘যতদিন টাকা আছে, ঘুরবো। টাকা শেষ হয়ে গেলে হয়তো আর ঘুরতে পারব না। তবে মনের ভেতর জমে থাকা ভ্রমণের গল্পগুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেব। যাতে তারাও ভ্রমণের প্রতি উৎসাহিত হয়। বিশ্বকে জানার আগ্রহ বাড়ে।’
এসইউ/পিআর