কোন প্রকার রোগ ও পোকার আক্রমণ না থাকায় এ বছর ভোলা জেলায় আখের ব্যাপক ফলন হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর আখের ফলন অনেক বেশি। ক্ষেতের ফলন দেখে মুখে হাসি ফুটেছে আখ চাষিদের। বেশি ফলন হওয়ায় চাষিরা আখ বিক্রি করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
Advertisement
সদর উপজেলার ভেলুমিয়া এলাকার আখ চাষি আব্দুল জলিল জানান, তিনি এ বছর ২ একর জমিতে আখ চাষ করেছেন। এতে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ নেই। অনেক টাকা লাভ হবে এ বছর। দৌলতখান উপজেলার চর খলিফা ইউনিয়নের কলকোপা গ্রামের নিজাম সিকদার জানান, তিনি এ বছর ১ একর জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে আখ চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার আখ বাজারে বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ১ লাখ টাকার আখ বিক্রি করতে পারবেন।
এদিকে আখের ব্যাপক ফলন হলেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা। চাষিদের অভিযোগ, মধ্যসত্ত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের কারণে পাইকারি বাজারে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তাই অনেক কম দামে আখ বিক্রি করছেন তারা।
ভোলা সদরের পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের মো. ফিরোজ মিয়া জানান, তারা বাজারে আখের সঠিক দাম পান না। ভোলা সদরে ৩-৪ জন পাইকার থাকলেও আড়ৎ মাত্র একটি। আড়ৎ থেকে যে দাম নির্ধারণ করা হয়; সে দামে চাষিদের বিক্রি করতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে অনেক কম দামে আখ বিক্রি করতে হয়।
Advertisement
চাষিরা পাইকারি বাজারে ন্যায্য মূল্য না পেলেও খুচরা বাজারে চড়া দামে আখ বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। ভোলা শহরের নতুন বাজারে আখ কিনতে আসা মো. আরিফ হোসেন জানান, খুচরা বাজারে আখের চড়া দাম। প্রতিটি আখ ৬০-৮০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ পাশের আড়তে আখের দাম অনেক কম।
এলাকার খুচরা বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আড়ৎ থেকে প্রতি শ’ আখ ৪-৫ হাজার টাকা দামে কিনতে হয়। অথচ আড়ৎদাররা চাষিদের কাছ থেকে ৫০০-১ হাজার টাকা দামে কেনে। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তারা বেশি দামে বিক্রি করে। তাই লাভের জন্য খুচরা আখ বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
শহরের নতুন বাজার এলাকার আড়ৎদার মো. ইয়ামিন মিয়া জানান, এ বছর জেলায় আখের ব্যাপক ফলন হয়েছে। বাজারে প্রচুর আখ উঠেছে। চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়ায় বাজার দাম একটু কম। কারণ ক্রেতার সংখ্যা কম। বাজারে কোন সিন্ডিকেট নেই। দাম কম পাওয়ায় কৃষকরা সিন্ডিকেটের কথা বলে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর জেলায় ৮২৪ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৪ হেক্টর বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার ৭২০ মেট্রিক টন।
Advertisement
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, ‘কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকিতে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে কৃষকরা আখের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না। আমরা কৃষকদের নিজ উদ্যোগে আখ বিক্রির পরামর্শ দিয়েছি।’
জুয়েল সাহা বিকাশ/এসইউ/এমকেএইচ