ধর্ম

নামাজের জামাআতে ইমামকে সেজদায় পেলে কী করবেন মুসল্লি?

মসজিদে জামাআতে নামাজ পড়তে গেলে অনেক সময় দেখা যায়, ইমাম সাহেব রুকু শেষ করে সেজদায় চলে গেছেন। ইমামকে যদি সেজদায় চলে যায়, তবে সে সময় মুসল্লির করণীয় কী? মুসল্লি কি ইমামের দাঁড়ানোর অপেক্ষা করবে? নাকি সেজদায় অংশগ্রহণ করবে?

Advertisement

কেননা এসব ক্ষেত্রে মসজিদে অধিকাংশ মুসল্লিদের দেখা যায় যে, ইমামকে সেজদায় পেলে তারা পরবর্তী রাকাআত শুরুর অপেক্ষা করতে থাকে। ইমাম সেজদা শেষ করে দাঁড়িয়ে নতুন রাকাআত শুরু করবে কিংবা বৈঠকে বসবে। তারপর মুসল্লি ইমামের সঙ্গে নামাজে যোগ দেবে।

ইমামকে সেজদায় পেয়ে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ না করার একটা বিশেষ কারণ হলো-

মুসল্লিরা মনে করেন যে, ইমামকে রুকুতে পেলে মুসল্লি ওই রাকাআতটা পেয়ে যাবে এবং সে রাকাআত হিসাবে চলে আসবে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

Advertisement

‘যে ব্যক্তি ইমামকে রুকুতে পেলো সে (ওই) রাকাআতটি পেয়ে গেলো।’

সুতরাং ইমাম যদি রুকু শেষ করে সেজদায় চলে যান তবে ইমামের সঙ্গে সেজদায় যোগ দিলে আপাত দৃষ্টিতে মুসল্লির লাভ হচ্ছে না, কারণ তার ওই রাকাআত তো হিসেবে আসবে না। তাই সেজদায় গিয়ে লাভ কী? সে জন্য মুসল্লিরা ইমামের সেজদা শেষ করে নতুন রাকাআত শুরুর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।

আসলে মুসল্লিদের এই যে ধারণা বা অভ্যাস; এটি আসলে ঠিক নয় বরং এ ধারণা বা অভ্যাসটি ভুল। মুসল্লিদের সেজদায় না গিয়ে অপেক্ষা করা এ জন্য ভুল যে, যদিও সেজদায় গেলে ওই রাকাআত হিসাবে আসবে না ঠিক; কিন্তু সেজদায় অংশগ্রহণ করলে অনেক সাওয়াব পাওয়া যাবে।

অপেক্ষা করলে কিন্তু কোনো সাওয়াব পাওয়া যাবে না কিন্তু সেজদায় অংশগ্রহণ করলে বিপুল পরিমাণ সাওয়াব লাভের সুযোগ থেকে যায়। একটি সেজদা করলেও একটি ইবাদত হয়ে যাবে।

Advertisement

সেজদা সম্পর্কে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা যখন সেজদায় যায়, তখন সে আল্লাহর একেবারেই কাছে অবস্থান করে।’

এক কথায় মহান আল্লাহর একান্ত প্রিয় হওয়ার এবং নৈকট্য লাভের একমাত্র মোক্ষম সুযোগ হলো ‘সেজদা’।

সুতরাং রাকাআত হিসাবে আসুক আর না আসুক, ইমামের সঙ্গে যদি একটি কিংবা দুটি সেজদা দেয়ার সুযোগ থাকে তবে সে সেজদায় অংশগ্রহণ করায় মুসল্লির জন্য রয়েছে কল্যাণ ও বরকত।

কেননা মুসল্লি এই একটি কিংবা দুটি সেজদার মাধ্যমে মহান আল্লাহর একান্ত কাছে চলে যাওয়ার কিংবা তার নেকট্য অর্জনের সুযোগ পেয়ে যায়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এক সাহাবি জানতে চান, হে আল্লাহর রাসুল! আমি জান্নাতে আপনার একান্ত সান্নিধ্যে থাকতে চাই, তা কীভাবে সম্ভব? কোন কাজে এ সৌভাগ্য অর্জন করতে পারবো?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন-

‘তুমি বেশি বেশি সেজদা করে আমাকে সাহায্য কর। অথ্যাৎ তুমি যদি বেশি বেশি সেজদা কর, তবে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকতে পারবে।’

আবার সেজদা এমন এক ইবাদত। যা আসলেই সংখ্যায় গণনা করা যায়। কারণ নামাজের সেজদা আর কুরআন তেলাওয়াতের সেজদা ছাড়া মানুষের তেমন অতিরিক্ত সেজদা করা হয় না।

তাই কেউ যদি জামাআতে নামাজ পড়তে এসে ইমামকে সেজদায় পায়, তবে মুসল্লির উচিত তখনই ইমামের সঙ্গে গিয়ে সেজদায় অংশগ্রহণ করা।

এ সেজদার মাধ্যমে আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভের পাশাপাশি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে জান্নাতে থাকার সৌভাগ্য লাভ হবে।

সুতরাং মসজিদে যাওয়ার পর মানুষের উচিত, ইমাম সেজদায় থাকুক কিংবা বৈঠকে থাকুক, ইমামের সঙ্গে নামাজে অংশগ্রহ করা। আর এতে যতক্ষণ ইমামের সঙ্গে নামাজে থাকা যাবে ততক্ষণই পাওয়া যাবে কল্যাণ ও সাওয়াব।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাআতে এসেই ইমামকে যে অবস্থায়ই পাবে সে অবস্থায় অংশগ্রহণ করে সাওয়াব ও কল্যাণ লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর