মতামত

ভ্যাট প্রত্যাহার : ভাবিয়া করিও কাজ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের টিউশন ফির সাথে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে অবশেষে সরে এল সরকার। তবে এমনি এমনি আসেনি। ছাত্রদের এ নিয়ে রাজপথে নামতে হয়েছে। আন্দোলনের কারণে চরম দুর্ভোগও পোহাতে হয়েছে সর্বস্তরের মানুষজনকে। এরপরও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে এটি স্বস্তির দিক। এ জন্য সরকার প্রশংসা পেতে পারে। তবে ভ্যাট হোক আর যাই হোক, কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার আগে অবশ্যই স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে নিতে হবে। নাহলে পরিণতি যে কেমন হয় তা তো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনই দেখিয়ে দিল। তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবেচিন্তে। আমরা ইতিপূর্বেও এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে বলেছি, শিক্ষার ওপর ভ্যাট আরোপের বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে অদূরদর্শিতার বিষয়টিও স্পষ্ট।  সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরই মূলত ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে ভ্যাট নিয়ে অর্থমন্ত্রীর একেক বার একেক রকম কথাবার্তার কারণে পরস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে বিষয়টির সুরাহা হয়। ভ্যাট প্রত্যাহারের ফলে ছাত্ররাও তাদের অবরোধ তুলে নেয়। ছাত্রদের এই আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। কোনো ভাঙচুর বা জ্বালাও পোড়াওয়ের দিকে তারা যায়নি। সরকারও প্রথম দিকে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করলেও পরে অবশ্য নির্বিঘ্নেই ছাত্ররা তাদের কর্মসূচি পালন করতে পেরেছে। ছাত্রদের অবরোধ কর্মসূচির কারণে অবশ্য সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। ভবিষ্যতে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট সকলের। ছাত্র আন্দোলনের ফলে ভ্যাট প্রত্যাহার হয়েছে। এরফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত টিউশন ফি আদায়সহ নানা অনিয়মের চিত্রটিও কিন্তু সামনে চলে এসেছে। ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের অন্যতম শ্লোগান ছিল ‘শিক্ষা কোনো পণ্য নয়`। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেভাবে চলছে তাতে কি এ কথা বলার সুযোগ আছে? যে উচ্চ হারে টিউশন ফি নেওয়া হয় সেটির মধ্যে  সেবার মানসিকতার চেয়ে বাণিজ্যের দিকটিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ছাত্ররা ভ্যাট প্রত্যাহারের আন্দোলনে সফল হয়েছে। বলা হয়,  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে ছাত্রদের পক্ষাবলম্বন করেছে। এখন যদি অতিরিক্ত টিউশন ফি আদায় বন্ধসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে ছাত্ররা আন্দোলন করে তাতে কি তাদের সমর্থন থাকবে? ছাত্রদের যাতে বার বার আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে না হয় এ জন্য টিউশন ফি কমানো ও বাস্তবসম্মত করাসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে যাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সঠিক নিয়ম-কানুন ও মান বজায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে।এইচআর/এমএস

Advertisement