দেশে ডায়রিয়া-কলেরার প্রকোপ বাড়ছে! রাজধানীসহ সারাদেশে গড়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগীদের সকলেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানালেও বাস্তবে তাদের অনেকেই কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১২ আগষ্ট পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩২ রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলা হলেও তাদের অধিকাংশই ছিল কলেরার রোগী। কলেরা বললে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিতে পারে এ আশঙ্কায় কলেরার রোগীকেও ডায়রিয়ার রোগী হিসেবে দেখানো হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইইডিসিআর এর একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, রাজধানীসহ দেশের যে কোন স্থানে ডায়রিয়ার অস্বাভাবিক সংক্রমণ শুরু হলে তারা একাধিক রোগতত্ত্ববিদ সমন্বয়ে টিম পাঠিয়ে আক্রান্তদের সাক্ষাতকার ও প্রয়োজনে খাবার পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করান।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা দেখতে পান খাবার পানির মধ্যে কলেরার জীবাণু রয়েছে। বিভাগীয় শহরের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে পানির লাইনের সংযোগ নেয়ার ফলে অনেক সময় পয়ঃনিস্কাশন ও পাইপ লিক হয়ে পানি পানের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে দূষিত পানি পান করে মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়। ডায়রিয়া ও কলেরায় আক্রান্ত রোগীর উপসর্গ প্রায় একইরকম হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসকরা ডায়রিয়া রোগী হিসেবে চিহ্নিত করে।কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিন শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু ভর্তি হয়েছেন। এ সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এক সঙ্গে বিপুল সংখ্যক মানুষের আক্রান্ত হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে আইইডিসিআর এর টিম পাঠানো হয়েছে।টিমের ধারণা, চিকিৎসাধীনরা কলেরার রোগী। এর আগে আদমজীতে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে আইসিডিডিআরবিতে শতাধিক গার্মেন্টস কর্মী ভর্তি হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে দুই লাখ ৩৯ হাজার একশ ৩৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে আট জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় এক হাজার মানুষ। ২০১৪ সালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৬৫ হাজার ১৪ জন। এ সময় মারা গেছেন ২৪ জন। এ ব্যাপারে আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে শনিবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগে কোনটি ডায়রিয়া আর কোনটি কলেরা তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। পানি বিশুদ্ধ না হলে ডায়রিয়া ও কলেরা উভয়ই হতে পারে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কলেরার প্রকোপ বেড়েছে এমন অভিযোগ মানতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এমইউ/এসআইএস/আরআইপি
Advertisement