দায়িত্বরত অবস্থায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে চাপা দেয়ার ঘটনায় আটক যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানচালক মো. জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বন্দর থানায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
Advertisement
মামলায় চালক মো. জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৭টি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। বেপরোয়া গতিতে যান চালানো, সিগন্যাল অমান্য, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, সরকারি সম্পত্তির (মোটরসাইকেল) ক্ষতিসাধন, হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণসহ ৭টি অভিযোগ মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে আহত সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন> যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানের চাপায় মৃত্যুর মুখে ট্রাফিক সার্জেন্ট
Advertisement
সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত। তার বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। আটক যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানচালক মো. জলিল মিয়া টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকার মৃত জলিল সিকদারের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের কর্নকাঠী জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। বেলা সোয়া ১২টার দিকে পটুয়াখালীগামী যমুনা গ্রুপের গাড়ি বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যানকে (ঢাকা মেট্রো উ-১২-২০৫৪) থামার সংকেত দেন সার্জেন্ট কিবরিয়া।
কাভার্ডভ্যানটি ট্রাফিকের সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সার্জেন্ট কিবরিয়া একটি মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানটির সামনে গিয়ে ফের তাকে থামার সংকেত দেন। কাভার্ডভ্যানচালক জলিল মিয়া এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট কিবরিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন> এজলাসে বিচারকের সামনেই যুবককে হত্যা করলো আসামি
Advertisement
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠির নলছিটি থানা পুলিশ ধাওয়া করে চালক জলিল সিকদারসহ কাভার্ডভ্যানটি আটক করে। এদিকে পুলিশ সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল থেকে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম বাকির হোসেন জানান, সার্জেন্ট কিবরিয়ার দুই পায়ের ৪টি স্থান ভেঙে গেছে। এছাড়া তার মুত্রথলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার অবস্থা খারাপ দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরপরই তাকে জরুরি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন> যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানের চাপায় মৃত্যুর মুখে ট্রাফিক সার্জেন্ট
ঢামেকের আবাসিক সার্জন ডা. আলাউদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘ঢামেকে আনার পরপরই তাকে জরুরি বিভাগের আইসিইউতে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে। তার কোথায় কোথায় আঘাত আছে সেগুলো দেখা হচ্ছে। জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানার সহকারী কমিশনার শাহেদ আহম্মেদ চৌধুরী জানান, আটক যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানচালক মো. জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টাসহ ৭টি ধারা উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কাভার্ডভ্যানটির ফিটনেস ঠিক ছিল কি-না তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘দুর্ঘটনার পরপরই ঘাতক কাভার্ডভ্যানসহ চালককে আটক করা হয়েছে। সার্জেন্ট কিবরিয়ার চিকিৎসায় সবধরনের সহায়তা পুলিশের পক্ষ দেয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক তার চিকিৎসার খোঁজ নেয়া হচ্ছে।’
সাইফ আমীন/এমআরএম