জাতীয়

তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি মিলবে কি?

>> এবারও ব্যাপক জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রাজধানীতে>> ওয়াসার পাম্পের সংখ্যা বাড়াতে বলেছে দুই সিটি >> শুক্রবার রাজধানীতে ৫০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি

Advertisement

বর্ষায় রাজধানীবাসীর তিক্ত এক অভিজ্ঞতার নাম জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার দীর্ঘ ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। এবার সে ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতি বছরই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়েন ঢাকাবাসী। নগরীর বড়-ছোট সড়ক থেকে অলিগলিগুলোতে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নেয়। সেই সঙ্গে ড্রেন থেকে আবর্জনা উঠে সয়লাব হয় পুরো সড়ক, অলিগলি।

আরও পড়ুন>> যাত্রাবাড়ীতে ৮৮ সালের বন্যা, স্রোতে ভেসে যাচ্ছে কুমড়া

Advertisement

আষাঢ়ের শেষপ্রান্তে এসে শুক্রবার (১২ জুলাই, ২৮ আষাঢ়) রাজধানীতে ৫০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রায় দিনব্যাপী থেমে থেমে বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বিশেষ করে আরামবাগ, মতিঝিল, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শান্তিনগর, ইস্কাটন, মগবাজার, বাড্ডা, মোহাম্মদপুরসহ মিরপুরের বেশির ভাগ এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকে বৃষ্টির পানি।

কোথাও কোথাও হাঁটুপানি মাড়িয়ে আবার কোথাও রিকশায় পারাপার করতে হয় সাধারণ মানুষকে। ফলে এবার পুরোদমের বর্ষায় ব্যাপকভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হবে রাজধানীবাসীকে- এমন ধারণা অনেকের।

তবে এবারের বর্ষায় রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে সেবা সংস্থাগুলো।

ঢাকা ওয়াসা বলছে, রাজধানীর ১৫টি খালের ২০ কিলোমিটার ও ৩০০ কিলোমিটার স্টর্ম ওয়াটার ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া চারটি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী পাম্পের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি অপসারণের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।

Advertisement

আরও পড়ুন >> পানিতে ভাসছে বঙ্গবাজার-নিউমার্কেট!

এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ড্রেনগুলো পরিষ্কার করছে। তবে দুই সিটি কর্পোরেশন বলছে, ওয়াসাকে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাম্পের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। তা না হলে এবারও নগরীতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা থেকে যাবে।

রাজধানীবাসীকে জলজট থেকে মুক্তি দিতে ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে একটি প্রকল্প হাতে নেয় ঢাকা ওয়াসা। ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং খাল উন্নয়ন নামের প্রকল্পের সময় এক বছর পার হলেও অর্ধেক কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ১৬টি খাল উন্নয়নের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, শেরেবাংলা নগর, দারুসসালাম, মিরপুর, পল্লবী, ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা, বিমানবন্দর এলাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, শঙ্কর, জিগাতলা, রায়েরবাজার এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করাই ওই প্রকল্পের প্রধান কাজ। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত বিদ্যমান খালগুলো খনন ও প্রশস্ত করে তীর উন্নয়ন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে খালের দুই তীরের পরিবেশ উন্নত করাও ছিল এ কাজের অংশ।

আরও পড়ুন >> বন্যা পরিস্থিতি জানাতে কন্ট্রোল রুম

এদিকে ডিএসসিসি সংশ্লিষ্টরা সম্প্রতি তাদের ড্রেনগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে জানতে পারেন যে, ঢাকা ওয়াসার ড্রেনের কারণে ডিএসসিসি এলাকার ৩০টি স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও তৈরি করেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলাবদ্ধতার কারণে ১৬টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অথচ এ নিয়ে ঢাকা ওয়াসা এখনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, আমাদের ড্রেনগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখেছি, ঢাকা ওয়াসার ড্রেনগুলো খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। তাদের ড্রেনের কারণে যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়, আমরা তার একটা তালিকা করে ঢাকা ওয়াসাকে দিয়েছি।

ওয়াসা সূত্র জানায়, ৩০০ কিলোমিটার স্টর্ম ওয়াটার ড্রেনের পরিষ্কার কাজ চলছে। ২৪৯ কিলোমিটার পরিষ্কার হয়েছে। এছাড়া ভারী বৃষ্টিপাত হলে চারটি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী পাম্পের মাধ্যমে পানি অপসারণ করা হবে।

আরও পড়ুন>> পানি যাবে কোথায়?

সংস্থাটি আরও জানায়, এবারের বর্ষায় রাজধানীতে যেন জলাবদ্ধতা না হয়, সেজন্য গত বছর ১৭টি খালের ৩০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়। পানি যেন দ্রুত ড্রেন দিয়ে চলে যেতে পারে, এজন্য ৩০০ কিলোমিটার স্টর্ম ওয়াটার ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। রাস্তার পানি যেন দ্রুত ড্রেনে প্রবেশ করতে পারে, সেজন্য ৭০০টি ক্যাচপিট (নালার ওপরের ছিদ্রযুক্ত ঢাকনা) পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন বলেন, রাজধানীতে যেন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সবার সহযোগিতায় জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

এদিকে সম্প্রতি জলাবদ্ধতা নিরসনে কালশী থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত বাইপাস পাইপ ড্রেন সংযোগ কাজের উদ্বোধন করেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। কালশী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কালশী থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ১,১৮৮ মিটার দীর্ঘ বাইপাস পাইপ ড্রেন সংযোগ কাজের উদ্বোধন করা হয়।

আরও পড়ুন>> ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে

অন্যদিকে ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, তাদের এলাকায় পানি নিষ্কাশনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫১টি স্লুইস গেট রয়েছে। এসব গেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া দুর্ভোগ নিরসনে জলাবদ্ধতা-প্রবণ এলাকায় অস্থায়ী পাম্প বসাতে ঢাকা ওয়াসাকে সুপারিশ করেছে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।

এএস/জেডএ/এমএআর/পিআর