‘এমন দিনে তারে বলা যায়/এমন ঘনঘোর বরিষায়/এমন দিনে মন খোলা যায়-’ কিংবা ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী/ উড়ে চলে দিগ্-দিগন্তের পানে’- রবি ঠাকুরের কবিতার মতো এভাবেই বৃষ্টিস্নাত সজীবতার রূপ নিয়ে হাজির হয় বর্ষা। রূপময় ঋতু বর্ষার যেন মেঘবতী জলের দিন। বৃষ্টির সাথে কদমের ভালোবাসা তাই খুবই নিবিড়। অথচ ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে সেই কদম ফুল।
Advertisement
কদম ফুল সবাই পছন্দ করে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা কদম ফুল নিয়ে খেলা করে। এ ফুল আমাদের দেশের সব এলাকায় দেখা গেলেও এর আদি নিবাস ভারতের উষ্ণ অঞ্চলে, চীন ও মালয়ে। কদম নীপ নামেও পরিচিত। এছাড়া বৃত্তপুষ্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভি ইত্যাদি মনোহর সব নাম রয়েছে কদমের।
ছোট বলের মতো দেখতে এ ফুলের ভেতরভাগে রয়েছে মাংসল পুষ্পাধার। যাতে হলুদ রঙের পাপড়িগুলো আটকে থাকে। পাপড়ি মাথায় থাকে সাদা রঙের পরাগ। হলুদ-সাদা কদমফুল গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে দেখতে সুন্দর লাগে। ফুলে ভরা কদমগাছ দেখতে অসাধারণ হলেও এর আর্থিক মূল্য খুব কম। কাঠ নরম বলে আসবাবপত্র তৈরি করা যায় না। কাঠ দিয়ে দেয়াশলাই ও কাগজ তৈরি হয়ে থাকে।
> আরও পড়ুন- সড়ক ও রেলপথে হুমকির মুখে বন্যপ্রাণী
Advertisement
শুধু সৌন্দর্য নয়, ভেষজ গুণের পাশাপাশি কদমের রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্বও। কাঠ দিয়ে কাগজ, দেয়াশলাই ছাড়াও তৈরি হয়ে থাকে বাক্সপেটরা। আর কদমের ছাল, পাতা কিংবা ফুলের রস পিপাসা নিবারণের পাশাপাশি কৃমি ও জ্বরনাশক এবং বলকারক।
নাগরিক উঠানে সেই কদমের ঘ্রাণ এখন অনেকটাই যেন অতীত। নেই আর আগের মতো বৈভব। আষাঢ়ে বৃষ্টি তো ছুঁয়েছে বৃক্ষ। তবে সেই রিমঝিম জলে কদমের কোমলতা যেন খুঁজে পাওয়া ভার। চোখ জুড়ানো ঘন সবুজ পাতার মাঝে হলুদ বন্ধুতায় চিরচেনা কদম গাছ এখন চোখে পড়ে কমই। তাই হয়তো বা শহরতলীজুড়ে কদমের শুভ্ররাগে হৃদয় রাঙিয়ে নেওয়ার সুযোগ নাগরিক অবসর কিংবা ব্যস্ততায় প্রায় নেই বললেই চলে।
কদম্ব মানে হলো ‘যা বিরহীকে দুঃখী করে’। তাই কদমতলে বংশীও বাঁজে মরমে। যে সুরে সবারই একটাই আবদার পথজুড়ে ছাতার মতো ছেঁয়ে থাকা কদমের বৃষ্টি ভালোবাসার গল্পটা যেন না হয়, রূপকথার কল্পকাহিনি।
> আরও পড়ুন- সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সম্ভাবনা
Advertisement
যান্ত্রিক সভ্যতা ও নগরায়ণের যুগে কমতে শুরু করেছে কদমগাছ। অথচ আদিকাল থেকে কদম ফুল বর্ষার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে যাচ্ছে। কদমফুল ছাড়া বর্ষা যেন একেবারে একা, নিঃসঙ্গ। আর তাই প্রকৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি কদমগাছও রোপণ করা জরুরি।
লেখক: ফিচার ও ভ্রমণ লেখক।
এসইউ/এমকেএইচ