‘খালেদাকে কি ভুলে গেছে বিএনপি!’ এই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে ৫ জুলাই। সেখানে বলা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন, জেগেছে হতাশা। একইভাবে দৈনিক পত্রিকায় সংবাদটি পড়ে আমার মনে নানাবিধ প্রশ্ন জেগেছে। ‘নাইকো দুর্নীতি’ মামলার সাজা প্রত্যাহার করে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হওয়া কিংবা রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার প্রত্যয় এখন আর নেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি অংশ নিয়েছিল নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে। কিন্তু সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আন্দোলনের কিছুই হয়নি। সম্প্রতি পরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বেগম জিয়ার মুক্তিতে ‘প্যাকেজ’ কর্মসূচি দেওয়া হবে। কিন্তু দুই সপ্তাহেও কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেনি দলটি।
Advertisement
৭২-ঊর্ধ্ব বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৫১১ দিন কারাবাসে রয়েছেন। নানা রোগ-শোকে আক্রান্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য তাঁর দুর্দশা নিয়ে বিএনপির কোনো ভাবনাই নেই। এজন্য বলা হচ্ছে বেগম জিয়াকে বিএনপি ভুলে গেছে। আইনি লড়াইয়ের পথে তাকিয়ে আছে বিএনপির একটি অংশ। আরেক অংশ বলছে, আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। রাজপথে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু গত ১০ বছরে জ্বালাও-পোড়াও ছাড়া রাজপথে বিএনপি-জামায়াত কোনো ধরনের আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে পারেনি। আসলে বিএনপি এখন তারেক জিয়ার খপ্পরে। লন্ডন প্রবাসী পলাতক আসামি তারেক জিয়ার ভুল নির্দেশনায় দলটি এখন ছন্নছাড়া। অতীতে খালেদা জিয়া নতুন প্রজন্মের নাম করে তার দুর্নীতিবাজ দুই পুত্রকে ক্ষমতায় বসাতে চেয়েছিলেন। কোকো মারা গিয়ে সেই চেষ্টা থেকে মাকে মুক্তি দিয়েছে। এখন খালেদা জিয়া নিজে দুর্নীতির দায়ে সাজাভোগ করছেন জেলে বন্দি হয়ে।
সকলের নিশ্চয় মনে আছে, খালেদা জিয়া জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছিলেন। তার দুই ছেলে পিতার নামে অরফানেজ ট্রাস্ট করে এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন। বিচারে খালেদা জিয়ার ৫ বছর এবং তারেক জিয়ার দশ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। মুদ্রাপাচার মামলায় খালেদার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোকে ২০১১ সালের ২৩ জুন ছয় বছর কারাদণ্ড দেয় ঢাকার জজ আদালত। এসব ঘটনা মাথায় রেখেই কোনো কোনো নেতা দল পুনর্গঠনের জন্য কাজ করছেন কিন্তু তাঁরাও স্বার্থবাদী আর সুবিধাবাদী রাজনীতির ঘেরাটোপে আটকে আছেন। সবমিলে বিএনপি এখন মুর্মূষু রাজনৈতিক দল, বেগম খালেদা জিয়ার মতো অসুস্থ, দুর্বল এবং নেতৃত্বশূন্য দিশাহীন।
দুই
Advertisement
সংবাদপত্রের সূত্র থেকে জানা যায়, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে অনেকটা নীরব বিএনপির হাইকমান্ড। গত দেড় বছরে শুধু রাজপথে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ আর শুধু বক্তৃতা-বিবৃতিতে বেগম জিয়ার মুক্তি চাইছেন। রাজপথের কোনো শক্ত কর্মসূচিতে যেতে চাইছেন না নেতারা। এতে উটকো ‘ঝামেলা’ বাড়বে বলেও মনে করেন নেতৃবৃন্দ। বাস্তবে আত্মকেন্দ্রিক ব্যস্ততায় দলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা। এরই মধ্যে বিএনপি নেতারা নানা ইস্যুতে পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। একজন আরেকজনকে বিএনপির শত্রæ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। এক ধাপ এগিয়ে সরকারের ‘দালাল’ বা ‘এজেন্ট’ বলছেন।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে পাঁচ এমপির শপথে নেতা-কর্মীদের ধারণা ছিল, বেগম জিয়ার মুক্তি নিয়ে সমঝোতার অংশ হিসেবে তারা সংসদে গেছেন। এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, এমপিদের শপথের সঙ্গে বেগম জিয়ার মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। আসলে বিএনপি নেতারা সবাই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। নিজের অর্থ সম্পদ রক্ষা, নিজের পদ-পদবি, নমিনেশন বা বলয় সৃষ্টি করতে মরিয়া কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি বড় অংশ। এক্ষেত্রে মা’র মুক্তির জন্য আন্দোলনকে চাঙ্গা করার বিষয়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়ার ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
অনেক আগেই উইকিলিকস খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এবং তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কিত নানান বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে। তারেক রহমান জিয়ার নটরিয়াস জ্যেষ্ঠপুত্র এবং রাজনৈতিক উত্তরাধিকার। তাকে অনেকে বলে থাকেন দুর্নীতিবাজ, রাজনীতি ও ব্যবসায়ী ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ, অর্ধ শিক্ষিত ও দুর্বিনীত। তবে তিনি বিএনপির সিনিয়র পদে অভিষিক্ত হওয়ায় তার মা খালেদা জিয়া অধিকতর নিরাপদ অনুভব করেন। যদিও তারেক ‘হাওয়া ভবন’ খ্যাত ছায়া সরকারের কর্মকাণ্ডের মূল হোতা ছিলেন। উইকিলিকস রিপোর্টে মার্কিন তারাবার্তায় ভবিষ্যতে খালেদা জিয়া তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল।
পুত্রের গুণাবলি ও যোগ্যতা এবং মাতার প্রশ্রয় সম্পর্কে উইকিলিকস সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, খালেদা জিয়া কেবল নিজের সন্তান তারেককে নিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্র গড়ে তোলেন। একজন মা হয়ে তার পুত্রের সুখকর ভবিষ্যৎ রচনার জন্য অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি করেছেন; রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করেছেন নির্বিচারে। পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত একটি স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জির চমক দেখাতে গিয়ে সন্তানরা দুর্নীতির চোরাগুপ্তাপথ বেছে নিলে তাদেরকে নিষেধ করেন নি তিনি। ফলে বিএনপি’র মতো রাজনৈতিক দল তার গতিপথ হারিয়েছে।
Advertisement
তিন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পক্ষান্তরে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভরাডুবি এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেওয়া; উপরন্তু ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পুনরায় ভরাডুবি হওয়ায় গত একদশকে আবর্তিত বিএনপি’র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। মহাজোট সরকারের আমলে বিরোধী দল হিসেবে জনগণের কোনো দাবি নিয়ে তারা রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভূত হতে পারে নি। বরং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় নিজেদের অবস্থান ছিল অস্পষ্ট।
দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে কোনো ধরনের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি বিএনপি’র কোনো নেতাকে। আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতেও ব্যর্থ হয় তারা। বরং ভারতবিরোধী হওয়ায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে বেগম খালেদা জিয়া বিতর্কিত হন। আর দুর্নীতির মামলায় নিজের অবস্থান জনগণের কাছে পরিষ্কার করতে এ পর্যন্ত সক্ষম হননি তিনি। অন্যদিকে বিএনপি’র কিছু নিবেদিত সমর্থক শ্রেণি থাকলেও ১০ বছরে তাদের অবস্থানও পাল্টে গেছে।
কেউ কেউ রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। কেউ বা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। অতীতে হরতাল-অবরোধ দিয়ে ঘরে বসে থেকে বিএনপি নেতারা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা সাধারণ মানুষকে আরো বেশি ভোগান্তিতে ফেলেছিল। কারণ পেট্রোল বোমা আর আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারার ভয়ঙ্কর সংস্কৃতি চালু করেন তারা। ফলে গত ১০ বছরে বিএনপি’র রাজনীতি বিভিন্ন অভিযোগের কারণেই জনসমর্থন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। অবশ্য এই সময়ের মধ্যে তারা একাধিক জনসমাবেশ করলেও নির্বাচনে তারেক জিয়ার নমিনেশন বাণিজ্য দলের কর্মকাণ্ডকে বিতর্কের মধ্যে পতিত করে।
বিএনপি’র নেতৃত্বে তারেক জিয়ার মতো ব্যক্তির প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন এখন সর্বত্র। ২০০৭ সালের ঘটনাধারায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান লন্ডনে গিয়ে আর দেশে ফেরেননি। সেখানেই তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন; তার রাজনৈতিক জীবনে দেউলিয়াত্ব প্রকাশের সূচনা সংগীতও তখন থেকে বেজে চলেছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা স্পষ্ট হওয়ায় তিনি এখন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। এজন্য ভবিষ্যতে ২০ দলীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রীত্বের আসনেও ঘৃতাহুতি দিয়েছেন তিনি।
অনেক আগেই ব্রিটেনের নাগরিকত্ব লাভ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার অক্ষমতাও প্রকাশ পেয়েছে। উপরন্তু সেখানে বসে আওয়ামী লীগ সরকার ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নানাবিধ বিভ্রান্তিকর কথা বলে চলেছেন। আসলে ব্রিটিশ সরকারের কাছে বর্তমান সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রচার করে তার রাজনৈতিক আশ্রয় কতটুকু দেশপ্রেমিক নেতার পরিচয় বহন করে- তা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের দ্বারা তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন বলে প্রচার করছেন। এসব কতটুকু সত্য?
২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের ঘটনাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহার করে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ কিংবা আওয়ামী লীগ সরকার ব্যর্থ অথবা বিরোধী দলকে নিষ্পেষণ করা হচ্ছে বলে প্রচারে নেমেছিল বিএনপি; যা একেবারে হাস্যকর। আবার বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বিশ্বের সরকার প্রধানরা সমর্থন করছে না বলে প্রচারও ধান্দাবাজ ব্যক্তির নিজের আখের গোছানোর অপচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। আসলে তারেক রহমান নিজেই অপরাধী; ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার খল নায়ক ও খুনি এবং অর্থপাচারের প্রকৃত আসামি, দুর্নীতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
উল্লেখ্য, মানুষ হত্যার আসামি বলেই তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে এ সরকারের আমলে মামলা পরিচালিত হয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে অর্থপাচার ও আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি করে আরও দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তাকে গ্রেফতার করেছিল ২০০৭ সালে যৌথবাহিনি। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে আর ফিরে না এসে এখন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন তিনি। তারেক জিয়া ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন মামুনের অর্থপাচারের মামলাটি হয় ২০০৯ সালে ২৬ অক্টোবর। মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২৯ মার্চ ২০০৭ সালে যে শীর্ষ জঙ্গিদের ফাঁসি কার্যকর করে তাদের সকলেরই তারেক রহমান ও জামাত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই অতীতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত হরকাতুল জিহাদের প্রধান মুফতি হান্নান তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হামলার সাথে বিএনপি নেতা তারেক রহমান, আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফজ্জামান বাবর এবং ইসলামী ঐক্য জোট নেতা মুফতী শহিদুল ইসলামের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার অন্যতম সাজাপ্রাপ্ত আসামি লন্ডনে আশ্রিত তারেক রহমান।
চার
মূলত তারেকের মতো ব্যক্তিদের রাজনৈতিক দলের প্রধান হওয়ার কারণেই গত ১০ বছরে বিএনপি’ নেতৃত্বে নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দেশের আপামর জনসাধারণের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করা হয়েছিল। আসলে শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। রাজনৈতিক দলের সাফল্য নির্ভর করে শক্তিশালী নেতৃত্বের ওপর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর সংজ্ঞার্থ অনুসারে, প্রতিদ্ব›িদ্বতা ও সংঘাতপূর্ণ প্রেক্ষাপটে নেতা ও অনুসারীগণ কর্তৃক স্বাধীনভাবে অথবা সমঝোতাপূর্ণভাবে স্থিরকৃত কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও মূল্যবোধ, বিভিন্ন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য সম্পদরাজি ব্যক্তির দ্বারা সহজলভ্য করার পরস্পর বিনিময়কৃত প্রক্রিয়াই হলো নেতৃত্ব। এই সংজ্ঞায় রাজনীতি ও উন্নয়নের ধারণা বিজড়িত।
জনগণের মৌলিক চাহিদা ও প্রয়োজনসমূহ একটি ভিশনের মাধ্যমে উচ্চতর চাহিদা ও প্রয়োজনে রূপান্তরিত করা নেতৃত্বের মৌল লক্ষণ। জনগণের কাছে নেতৃত্বের একটি ভিন্নতর আবেদন থাকে যা কোনো ব্যক্তির গুণাবলির প্রতি জনগণের মধ্যে আকর্ষণ ও সক্রিয়তা সৃষ্টি করে। নেতা নির্দিষ্ট গুণাবলির দ্বারা সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা। তাঁর রয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যতিক্রমী ক্ষমতা যা সাধারণ ব্যক্তির মধ্যে অনুপস্থিত। এজন্য তিনি নেতা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন। বিএনপি-জামায়াতের নেতারা প্রকৃতপক্ষে আলাদা, ভিন্ন, স্বতন্ত্র ও নেতৃত্বের গৌরবজনক আসনে সমাসীন নন। তাঁরা জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে ভূমিকা রাখেননি। জনতার আকাঙ্খাসমূহ এবং টিকে থাকার বাস্তবতার মধ্যে সেতু বন্ধনের সাহায্যে রাজনীতিতে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।
এজন্যই গত ১০ বছরের রাজনীতিতে তারা হত্যা ও নাশকতার পথ বেছে নিয়েছেন। কিন্তু সে পথে রাজনীতিতে সাফল্য এখন সুদূর পরাহত। কারণ যুগ এখন পাল্টে গেছে; মানুষ নাশকতা ও জঙ্গিবাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এজন্য খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে রাজপথের আন্দোলনে জনসমর্থন নেই। অন্যদিকে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন পাচ্ছে না বলে জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতিতেও নিষ্ক্রিয়। ফলে খালেদা জিয়াকে বিএনপি ভুলে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/পিআর