গাইবান্ধায় বিআরটিএ অফিসের ঘুষ গ্রহণের ভিডিও চিত্র দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাইটসহ বিভিন্ন দফতরে প্রেরণ এবং ফেসবুক ও ইউটিউবে অপলোড করার পর বিপাকে পড়েছেন গাইবান্ধার এক যুবক। নিরাপত্তার জন্য অবশেষে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
Advertisement
জানা গেছে, জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়ের যুবক ফরহাদ হোসেন। মাস দুয়েক আগে নতুন মোটরসাইকেল কিনেছেন তিনি। বৈধভাবে মোটরসাইকেল চালাতে প্রয়োজন লাইসেন্স। কিন্তু লাইসেন্সের জন্য শো-রুমে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। তাই ফরহাদ হোসেন তার গাড়ির যাবতীয় কাগজপত্র দিয়ে ঈদুল ফিতরের দুই দিন আগে গাইবান্ধার বিআরটিএ অফিসে যান। সেখানে গিয়ে লাইনেন্সের যাবতীয় কাগজপত্র অফিসারকে দেখান তিনি।
এ সময় মোটরযান পরিদর্শক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান লাইসেন্সের জন্য টাকা শো-রুমে না দিয়ে বিআরটিএ অফিসে আসার কারণ জানতে চান। তখন ফরহাদ জানান, শো-রুমে টাকা বেশি লাগে তাই সরাসরি এখানে আসা। তখন আমিনুল ইসলাম জানান, কাজ সারতে চাইলে অপেক্ষা করতে হবে।
কথা অনুযায়ী টানা ৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পরে ফরহাদ দেখতে পান, বিআরটিএ অফিসে আসা সবার ফাইল স্বাক্ষর করে দিচ্ছেন আমিনুল ইসলাম। প্রতিটি ফাইল বাবদ আমিনুল ইসলামের সহকারী আসাদ গোপনে অর্থ লেনদেন করছে। এসব ঘটনা স্মার্টফোনে ধারণ করেন ফরহাদ।
Advertisement
ফাইল স্বাক্ষরের জন্য দিনভর অপেক্ষার পর এক পর্যায়ে তিনি অধৈর্য হয়ে পড়েন। পরে আমিনুল ইসলামকে কয়েকবার অনুরোধ করলে সহকারী আসাদ অন্য রুমে নিয়ে গিয়ে ৭০০ টাকা ঘুষ চায় ফরহাদের কাছে। টাকা না দিলে স্বাক্ষর হবে না বলে জানিয়ে দেয়। ফরহাদ টাকা দিতে অসম্মতি জানান। পরে গোপনে আবার ঘুষ লেনদেনের ভিডিও করতে গেলে আমিনুল ইসলামের চোখে পড়েন।
এ সময় তার ফোনটি জব্দ করে ভিডিওগুলো ডিলিট করে দেন আমিনুল। ফরহাদের ফাইলে স্বাক্ষর করে হাসিমুখে একটা ছবি তুলে রাখেন। কিন্তু ভিডিওগুলো ঠিকই তার গুগল ড্রাইভে থেকে যায়।
কাজ শেষে বাসায় ফিরে আসেন ফরহাদ। পরে ভিডিওগুলো আপলোড করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেন। ভিডিও প্রকাশের পর বাধে বিপত্তি। বিভিন্ন মহল থেকে ফোন করে তাকে হুমকি দিতে থাকে।
শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় ০১৭২৪-১৪০৬৮৩ নম্বর থেকে তাকে ফোন দিয়ে খোঁজ জানতে চায়- বাড়ি কোথায় এবং গাইবান্ধা অফিসে কী হয়েছে। নানা বিষয়ে প্রশ্ন করে এবং বগুড়ায় আসতে বলে। এছাড়া তার এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকেও তার ব্যাপারে খোঁজ নেয় পুলিশ। বিষয়টি ক্রমেই জটিল হওয়ায় তিনি শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ থানায় জিডি করেন (জিডি নম্বর ২৫৮/১৯)। জিডিতে জীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুলে ধরা হয় ।
Advertisement
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাহিদ খন্দকার/এমএসএইচ