দেশজুড়ে

ডাক্তারকে ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, কিসের মহামান্য, আমারে চিনস!

২১ জুন, বিকেল ৫টা। মনতলা স্টেশনে ট্রেন থামতেই জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে ট্রেনে ওঠে ফুঁকতে থাকেন একজন। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সিগারেটের ধোঁয়া অসহনীয় লাগছিল। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ধূমপান না করার জন্য উনাকে অনুরোধ করলাম। তিনি তো কথা শুনলেনই না বরং উদ্যত হয়ে আমাদের বললেন, ‘তোদের বাড়ি কই, আমারে চিনস? দাঁড়া সামনের স্টেশনে তোদের সব কয়ডারে বানামু।’

Advertisement

তারপর যা হলো তার সঙ্গে সেই দৃশ্যগুলো এখনও ভুলতে পারছি না। ট্রেন শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে থামলে হঠাৎ ওই লোকটার ডাকে ২০-২৫ জন ট্রেনে উঠে আমাদের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে মারধর করে। এ সময় আমার কামড়ার অনেকেই পালিয়ে যায়। আমার সঙ্গে যারা ছিল তাদের ওই ম্যাজিস্ট্রেটের পায়ে ধরায়। আমি তার পা ধরতে রাজি না হওয়ায় আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। নিজেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতিষ্ঠানের একজন ডাক্তার বলে পরিচয় দেয়ার পরও উনি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলতে লাগলেন, কিসের মহামান্য? ওইখানে টুটুল নামে পুলিশের এক এসআই আমাকে জেলে ঢুকানো এবং ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়।

প্রকাশ্যে ট্রেনে সিগারেট খেতে নিষেধ করায় একজন কালেক্টরেট ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে এভাবেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রভাষক ডা. রফিউল সিরাজ।

চলন্ত ট্রেনে ধূমপানে বাধা দেয়ায় কিশোরগঞ্জের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এ ডাক্তারকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনজিৎ কুমার চন্দের বিরুদ্ধে।

Advertisement

এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার সকালে মেডিকেল কলেজের সামনে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। তারা বেশ কিছুক্ষণ কিশোরগঞ্জ-চামড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আ. ন. ম নওশাদ খান, জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল ওয়াহাব বাদলসহ আরও অনেকে এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মেডিকেল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, গত ২১ জুন জয়ন্তিকা ট্রেনে কিশোরগঞ্জ থেকে সিলেট যাচ্ছিলেন আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. মো. রাফিউল সিরাজ। পথে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ট্রেনের ভেতর ধূমপান করছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনজিৎ কুমার চন্দ। প্রতিবাদ করায় পরের স্টেশনে পুলিশ ডেকে তাকে মারধর করা হয়। পরিচয় দেয়ার পরও তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। পরে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

নির্যাতনের শিকার ডা. রাফিউল জানান, এখনও সেই দুঃসহ সময়ের কথা ভুলতে পারছি না। আমি এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ ঘটনায় গত ২৪ জুন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানায় মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল ওয়াহাব বাদল বলেন, বিষয়টি আমরা দেরিতে জানতে পারি। এ ঘটনায় অচিরেই তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ করা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আন্দোলনের পাশাপাশি এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনজিৎ কুমার চন্দের সরকারি নম্বরে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার বিষয়ে কথা বলার আগ্রহ জানিয়ে সেই নম্বরে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে ১০ মিনিট অপেক্ষা করেও ফিরতি কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি।

নূর মোহাম্মদ/এমএএস/এমএস