মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে হত্যাসহ গণহত্যার তিন ঘটনায় টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের ফাঁসির রায় দিয়েছেন যুদ্ধাপরাধ আদালত। বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার আসামির উপস্থিতিতে এ মামলার রায় ঘোষণা করে। এই রায়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচারে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। অবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা কার্যকরে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
Advertisement
৭০ বছর বয়সী আসামি মাহবুবুর একাত্তরে মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি বৈরাটিয়া পাড়ার আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে। মাহবুবুর ও তার ভাই আব্দুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান, তা উঠে এসেছে এ মামলার বিচারে। ২৩৫ পৃষ্ঠার রায় ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা তিনটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, হত্যা- গণহত্যার তিন অভিযোগেই মাহবুবুরকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছে আদালত। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে রায়ে।
স্বাধীনতা অর্জনের ৪৫ বছর পর যুদ্ধাপরাধের বিচার ছিল একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। কেননা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে দেশ আবার পরিচালিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ স্রোতে। এসময় জেলে আটক যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সংগঠন নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন সামরিক শাসক জিয়া।
শুধু তাই নয় যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদর, আল-শামসরা রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়। যুদ্ধাপরাধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করেন জিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া নিজামী, মুজাহিদের গাড়িতে তুলে দেন শহীদের রক্তখচিত লাল-সবুজ পতাকা। কিন্তু সবদিন সমান যায় না। অবেশেষে ঘাতকের দিন শেষ হতে থাকে। জনরায় নিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি যুদ্ধাপরাধ বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল গঠন করেন। এরপর একে একে গ্রেফতার করা হয় চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের।
Advertisement
ইতোমধ্যেই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা, এম কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ অনেক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। সবশেষ রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে হত্যাসহ গণহত্যার তিন ঘটনায় বিচারের রায় এলো।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে জাতি একে একে কলঙ্কমোচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ ফিরে আসছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারায়। যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসছে জাতি। অপরাধ করলে যে কেউ পার পায় না এই বার্তাটিও পৌঁছে যাচ্ছে সমাজে।
এরফলে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। গণতন্ত্র আরো মজবুত ভিত্তি পাবে। শোষণ, বঞ্চনাহীন অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাও সম্ভব হবে। আমাদের লক্ষ্য হোক সেই দিকে।
এইচআর/জেআইএম
Advertisement