জাতীয়

একটা চাকরির জন্য আর কত লড়বে মেয়েটা?

এ কেমন জীবন?শিক্ষিত হয়েও চাকরি নেই,মানুষ হয়েও স্বপ্ন দেখার অধিকার নেই,জীবনে কারো ভালোবাসা নেই,বেঁচে থাকার কোন নিশ্চয়তা নেই,থাকার জন্য কোন আশ্রয় নেই,অসুখ হলে ডাক্তার দেখানোর টাকা নেই,খিদে পেলে খাবার নেই,দায়িত্ব নেওয়ার মানুষ নেই,কাঁদলে চোখ মোছার কেউ নেই,আর মরে গেলে মনে রাখার কেউ নেই।কিন্তু আমি বাঁচতে চাই, বেঁচে থাকার সুযোগ চাই। আত্মনির্ভরশীল জীবন চাই, সেই জীবনে মানুষের ভালোবাসা চাই।

Advertisement

নিজের লেখা এমন কবিতা পাশে ঝুলিয়ে দুদিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চাকরির আশায় অনশন করছেন ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স পাস করা প্রতিবন্ধী চাঁদের কণা।

চাঁদের কণার সাথে কথা বলে জানা যায়, মাত্র ৯ মাস বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে দুটি পায়ের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় তার। কিন্তু ভেঙে পড়েনি তার মনোবল। হাতের ওপর ভর দিয়েই ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে ২০১৩ সালে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স শেষ করেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি দক্ষতা অর্জন করেছেন নাচ, গান, কবিতা লেখা ও আবৃত্তিতেও।

টিভি/রেডিওতে সংবাদপত্র পাঠ, টিভি প্রোগ্রাম গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা, নাটক লেখা, নাটকে অভিনয়, কম্পিউটারের সকল কাজ, স্ক্রিপ্ট তৈরি, ছবি আঁকা, ভিডিও এডিটিংসহ হাতের কাজে নানান ধরনের পারদর্শিতা অর্জন করেছেন।

Advertisement

চাঁদের কণা জানান, তার মা হাসনা হেনা একজন শিক্ষিকা। মায়ের উপার্জনেই তাদের সংসার চলতো। ১০ বছর আগে মায়ের মৃত্যুর পর থেকে পেনশনের সামান্য টাকায় কোনো রকমে টিকে আছে চাঁদের পরিবার। মা যখন মারা যায় তখন তিনি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর কারণে আর্থিক চাপে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তবে হাল ছাড়েননি, একটি বেসরকারি চ্যানেলে সামান্য বেতনে চাকরি করে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা।

আরও পড়ুন : মাস্টার্সে প্রথম স্থান অর্জন করা চাঁদের কণা অনশনে

পড়াশোনা শেষে সরকারি একটি চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু কিছুতেই মিলছে না সে চাকরি। চাঁদের কণা বলেন, আমি নিজেকে কখনো প্রতিবন্ধী বলে মেনে নিতে পারিনি। তাই নিজেকে এমনভাবে গড়ার চেষ্টা করেছি যেন একজন সফল মানুষ হয়ে উঠতে পারি। কিন্তু এত কিছুর পরও আমি কি সফল হতে পেরেছি? সবাই বলে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ড সোজা রাখার জন্যই না খেয়ে, না ঘুমিয়ে জীবনের সবটুকু পরিশ্রম দিয়ে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্তি মিলবে আমার এই কষ্টের জীবনের?

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের সকলের মা। দুঃখী মানুষের কষ্টে প্রধানমন্ত্রীর মন কাঁদে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দরভাবে কাটানোর জন্য একটি চাকরি চাই।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, আমি হাঁটতে পারি না, এটা কি আমার দোষ? আমার অর্থের জোর নেই, দেহে সুস্থতা নেই, তবে কি মরে যাব? নাহ এত সহজে হেরে যাবো না আমি। আমি বেঁচে থেকে প্রমাণ করে দিতে চাই, সমাজকে দেখাতে চাই মানুষের শরীর নয়, মানুষের প্রতিভা আর মনের জোর মানুষকে বড় করতে পারে। আমি সারা বিশ্বকে জানাতে চাই- আমি পারি, আমি অপরাজিত নারী।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মা নেই। এখন প্রধানমন্ত্রী আমার মা। আমি আমার মমতাময়ী মায়ের কাছে যেতে চাই। তার বুকে একটু আশ্রয় চাই। সে ছাড়া যে আমার আর কোনো গতি নাই। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অনুভব করেছি দারিদ্র্যতার কী কষ্ট। তার সাথে আবার শারীরিক সমস্যা। তবু স্বপ্ন দেখেছি একদিন অফিসার হব। আমার বাড়ি-গাড়ি হবে। আর সমাধান হবে প্রতিবন্ধকতার।

এমএএস/এনএফ/আরআইপি