দেশজুড়ে

কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে হাঁটুপানি, মেয়র বললেন উন্নয়নের ভোগান্তি

কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে সিলেট নগরের কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বুধবার বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে যায়। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

Advertisement

বর্ষা শুরু হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। এই বৃষ্টি জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে নগরের বেশ কয়েকটি এলাকার হাজার হাজার মানুষের জীবনে।

সিলেট নগর ঘুরে দেখা যায়, নগরের পশ্চিম সুবিদবাজার ও পাঠানটুলা এলাকা সবচেয়ে বেশি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ওই এলাকা দিয়ে যাওয়া সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক উপচে পানি ঢুকে পড়ে বিভিন্ন বাসাবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে। এতে চরম বিপাকে পড়েন ওই এলাকার মানুষ।

পাঠানটুলা এলাকার আব্দুল আহাদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, বর্ষার প্রথমে মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। ওই সময়ই রাতের বৃষ্টিতে পশ্চিম-সুবিদবাজার এলাকার মুল সড়কে হাটুজল জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ওই পানি নামতে না নামতেই বুধবার দুপুর থেকে বৃষ্টি হয়। এতে এলাকা তলিয়ে যায়। সড়ক ডুবে বাসাবাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে।

Advertisement

আব্দুল আহাদ বলেন, এই এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এই সমস্যা সমাধানে উদাসীন। সামনে আরও বৃষ্টি হবে। তখন পরিস্থিতি কি হবে তা ভাবলেই আঁতকে উঠতে হচ্ছে।

একই এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানি সড়ক উপচে আমাদের অনেকের বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এছাড়া সিলেট নগরের জিন্দাবাজার পুরানলেন, ছড়ারপাড়, পুরানলেন, ঘাসিটুলা, হাওয়াপাড়া, পায়রা আবাসিক এলাকা, ভাতালিয়া, দক্ষিণ সুরমার হবিনন্দীসহ নিম্নাঞ্চলীয় কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।

নগরের জিন্দাবাজারস্থ সোনালী ব্যাংকের উত্তর পাশে পুরানলেনের গলি সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে রাস্তাসহ পাশের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

Advertisement

ওই এলাকার আহমদ সোহেল ফাতেহ বলেন, মহানগর এলাকায় জনসাধারণের সুবিধার্থে বক্স ড্রেন নির্মাণ করা হলেও দুর্ভোগ আগের চেয়ে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তিনতারা বিপণির নিচে ঘন ঘন পাকা পিলার থাকার ফলে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বক্স কালভার্ট নির্মাণের ফলে ময়লা-আবর্জনা জমে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে বার বার অবহিত করার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না ।

একটু বৃষ্টি পাত হলেই পুরান লেন গলির বাসিন্দারা আতঙ্কে থাকেন কখন জানি বাসায় পানি ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে যায়। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

এদিকে, পাঠানটুলা এলাকার জলাবদ্ধতা পরিদর্শনে যান সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

পাশাপাশি নগরবাসীর এই দুর্ভোগ সাময়িক বলে দাবি করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নগরীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। কাজের সুবিধার্থে কিছু ড্রেনে বাঁধ দেয়া হয়েছিল। এই বাঁধের কারণে টানা বৃষ্টিতে অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তবে বৃষ্টি কমার সঙ্গে সঙ্গে পানি নেমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, নগরীর পানি সুরমা নদীতে গিয়ে পতিত হয়। কিন্তু সুরমা নদী ভরে যাওয়ায় বেশিরভাগ খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। তবে সিটি কর্পোরেশন যদি সময়মতো খাল খনন ও ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ না করতো তবে টানা এই বর্ষণে নগরীতে আরও ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো।

ছামির মাহমুদ/এএম/এমএস