গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ১-নং যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান পিনু। মঙ্গলবার সকালে শহরের মোহাম্মদপাড়ার আশ্রম রোডের বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
Advertisement
এ সময় তিনি বলেন, শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত কারণে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাজনীতিতে যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পিনু বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আমি। এর আগে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। মূল্যায়ন না পাওয়ার কিছুই নেই।
তিনি বলেন, বিএনপির দুর্দিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কতিপয় সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ, যারা কখনও বিএনপির রাজনীতি করেননি তাদেরকে দিয়ে বর্তমান কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে প্রকৃত জিয়ার আদর্শের সৈনিকদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এ সময় পিনুর স্ত্রী সাবেক জেলা মহিলা দলের সভাপতি মাহমুদা জামান লিপসা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২২ জুন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গোপালগঞ্জ বিএনপির ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। জেলা কমিটি ঘোষিত হওয়ার পর থেকে গোপালগঞ্জে বিএনপি শিবিরে নেমে আসে চরম হতাশা। নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তকে গোপালগঞ্জে বিএনপিশূন্য করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন।
Advertisement
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর বলেন, হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি এবং চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও দুস্থদের চাল চুরির অভিযোগে চেয়ারম্যানের পদ হারিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের দলের দায়িত্বশীল পদ দেয়া হয়েছে। এতে আগের চেয়ে আরও দুর্বল হয়েছে গোপালগঞ্জ বিএনপি। সিনিয়র নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি আমাকে মনোনয়ন দেয়। দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মধ্যযুগীয় কায়দায় আমি এবং আমার ছেলের ওপর বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। এখনও আমার ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। মূলত নবগঠিত গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি হলো সেলিমুজ্জামান সেলিমের একটি পকেট কমিটি। তাই এই কমিটি থেকে আমিও পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জেলা বিএনপির আরেক সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, এটা একটি তামাশার কমিটি গঠন করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেব আমরা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেজবা বলেন, শুরু থেকে গোপালগঞ্জে বিএনপির গ্রুপিং রয়েছে। ফলে দলটি কখনও দাঁড়াতে পারেনি। দুর্দিনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। কোটালীপাড়া একটি উপজেলা, সেখান থেকে জেলা বিএনপির কমিটিতে কোনো সদস্য রাখা হয়নি। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের উচিত ছিল সবাইকে নিয়ে এমন একটি জেলা কমিটি উপহার দেয়া যেখানে ত্যাগী, নবীন ও প্রবীণদের সমন্বয় ও যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হবে। তাতে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং কমবে। আগের চেয়ে শক্তিশালী হবে দল।
Advertisement
নবগঠিত জেলা কমিটির আহ্বায়ক শরীফ রাফিকুজ্জামান বলেন, কমিটির বিষয় নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ ও পরামর্শ থাকলে তারা কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এখানে কারও ব্যক্তিগত পছন্দ ও অপছন্দের বিষয় গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি সবাইকে নিয়ে দলকে শক্তিশালী করে তুলবো।
এস এম হুমায়ূন কবীর/এএম/পিআর