দেশজুড়ে

জামিন চাইতে গিয়ে কারাগারে লতিফ সিদ্দিকী

সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বগুড়ার একটি আদালত। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় অবৈধভাবে সরকারি জমি বিক্রি করে প্রায় ৪১ লাখ টাকা ক্ষতি করা-সংক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বৃহস্পতিবার বগুড়ার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের আদালত এ আদেশ দেন।

Advertisement

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় বগুড়ার আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুদকের মামলায় লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছিল। এ মামলায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি আদালতে জামিন নিতে গেলে আদালত তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী হেলালুর রহমান বলেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সরকারি নির্দেশনা মেনেই জমি বিক্রির সুপারিশ করেছেন। আইনগত সব ধাপও তিনি মেনে চলেছেন। তাকে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ।

এদিকে আদালত সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর জামিনের আবেদন নাকচ করে দিলে বিশেষ পুলিশি প্রহরায় তাকে আদালত থেকে বগুড়া কারাগারে নেয়া হয়। এ সময় তাকে খুব বিধ্বস্ত লাগছিল। তিনি ঢাকা থেকে তার ব্যক্তিগত স্টাফদের সঙ্গে তিনটি গাড়িতে করে বগুড়ার আদালতে আসেন। পরে লাল পাঞ্জাবি পরিহিত লতিফ সিদ্দিকীকে ছাড়াই অন্যরা ফিরে যান।

Advertisement

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অপর আসামি হলেন জমির ক্রেতা জাহানারা রশিদ। তিনি জামিনে আছেন। মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম।

এর আগে জমি বিক্রির ঘটনাটি প্রকাশ পেলে দুদক তদন্ত শুরু করে। পরে দুদকের দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, আদমদীঘিতে বিলুপ্ত একটি পাট ক্রয় কেন্দ্রের (রানীনগর পাট ক্রয়কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত) সম্পত্তি দরপত্র ছাড়াই গোপনে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেয়া হয়। পাট ক্রয় কেন্দ্রের প্রায় আড়াই একর জমিসহ স্থাপনা ও যন্ত্রপাতির বর্তমান বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু সরকারি ওই সম্পত্তি ২৪ লাখ টাকায় বগুড়া শহরের জাহানারা রশিদের কাছে বিক্রি করা হয়।

আদমদীঘি ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আদমদীঘির দরিয়াপুর মৌজার ২ দশমিক ৩৮ একর জমির ওপর কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। এটি নওগাঁর রানীনগর উপজেলা সদরের পাশে অবস্থিত। কয়েক বছর ধরে ওই কেন্দ্রে পাট কেনা বন্ধ আছে। ওই জমির ওপর ছয় হাজার ৯৫৪ বর্গফুটের তিনটি টিনের গুদামঘর। রয়েছে ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের বারান্দা, ১ হাজার ৫৫০ বর্গফুটের ইটের তৈরি একটি দালান, হস্তচালিত একটি জুটপ্রেসার, চেয়ার, লোহার সিন্দুকসহ নানা ধরনের আসবাব ও শতাধিক মূল্যবান গাছ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারি সম্পত্তি বিক্রির এ আদেশের বিরুদ্ধে রানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দীন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইসমাইল হোসেন ২০১১ সালের ১৩ মে হাইকোর্টে একটি রিট করেন।

Advertisement

রিটকারী ইসমাইল হোসেন জানান, রিট গ্রহণ করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। পাশাপাশি বিক্রির ওই আদেশের সব কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। অন্যদিকে ওই বছরের ১২ মে বিকেলে ক্রেতার লোকজন পাটকেন্দ্রের অবকাঠামো ভেঙে মালামাল নিতে গেলে এলাকাবাসী বাধা দেন। বাধার মুখে ক্রেতার লোকজন ফিরে যেতে বাধ্য হন।

দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারি এ জমি ইজারা নেয়ার জন্য ২০১০ সালের ১১ মে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন জাহানারা রশিদ। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের আওতায় সরকারি জমি ইজারা দেয়া হয়। কিন্তু তিনি ইজারার টাকা পরিশোধ করেননি। মন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ার কারণে জাহানারা জমি দখলে নিয়েছিলেন। ২০১১ সালের নভেম্বরে তিনি ওই জমি ক্রয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি সম্পত্তি বিক্রির নীতিমালা ভঙ্গ করে উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই সেটি বিক্রি করা হয়। সরকারি মূল্যের ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার ২১ টাকা মূল্যের জমি বিক্রি করা হয় মাত্র ২৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৭৪ টাকায়। তৎকালীন মন্ত্রী এসব করেছেন একক ক্ষমতাবলে। নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে তিনি সরকারের ৪০ লাখ ৬৯ হাজার ২১ টাকা ক্ষতি করেছেন। এতে দণ্ডবিধির ৪২০/১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তদন্তে এর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, বিলুপ্ত বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের (বিজেসি) প্রায় ৬৫ লাখ টাকা মূল্যের জমি লতিফ সিদ্দিকী ও জাহানারা রশিদ পরস্পর যোগসাজশে কেনাবেচা করে রাষ্ট্রের ক্ষতি করেছেন। তদন্তে এর প্রমাণ মিলেছে।

লিমন বাসার/আরএআর/জেআইএম