টনটনের সমারসেট কাউন্টি ক্লাবের আউটফিল্ড ছোট। ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, ড্যারেন ব্রাভো, শিমরন হেটমায়ার, শাই হোপ আর নিকোলাস পুরানরা মারলেই ছক্কা হবে। স্পিনারদের বিপক্ষে তাদের উড়িয়ে মারা শটগুলো গিয়ে ছিটকে পড়বে সীমানার ওপারে- ব্রিস্টলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ পন্ড হবার মুহূর্ত থেকে এ কথা শোনা যাচ্ছে, চলছে রাজ্যের জল্পনাকল্পনা ও গুঞ্জন। জানা গেছে, এ গুঞ্জনের ঢেউয়ের ঝাপটা গিয়ে লেগেছে দেশেও।
Advertisement
অনেকেই ধরে নিয়েছেন আগামীকাল (সোমবার) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ হয়তো চার পেসার নিয়ে মাঠে নামবে। যে কারণে অফস্পিনার মিরাজ নাও খেলতে পারেন। তাকে বাদ দিয়ে মানে একমাত্র স্পিনার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে চার পেসার নিয়ে মাঠে নাসবে বাংলাদেশ।
কিন্তু ম্যাচের ২৪ ঘন্টা আগে অধিনায়ক মাশরাফির কথা বার্তা শুনে মোটেই তা মনে হলো না। প্রায় ২০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে বেশ কবার ঘুরে ফিরে ঐ চার পেসার ফর্মুলা আর অফস্পিনার না খেলানোর প্রসঙ্গ উঠলো। কিন্তু একবারও মাশরাফি বলেননি যে, আমরা অফস্পিনার মিরাজকে বাদ দিয়ে চার পেসার নিয়ে খেলবো ।
বরং টাইগার অধিনায়কের কথা শুনে মনে হলো তিনি অফস্পিনার মিরাজকে খেলানোর পক্ষে। কিছু কিছু কথায় আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়েও দিয়েছেন মিরাজ খেলবেনই। এমনও হতে পারে গেইল, ব্রাভো, হেটমায়ারদের বিপক্ষে মিরাজ বোলিংয়ের সূচনাও করতে পারেন।
Advertisement
সেটা কেন? তবে না মাঠ ছোট, ক্যারিবীয়রা বিগ হিটার, তাদের পাওয়ার ও পিঞ্চ হিটিংয়ের বিপক্ষে অফস্পিনার মিরাজের বল যদি খালি সীমানার বাইরে গিয়ে আছড়ে পড়ে, তাহলে? এমনটা যারা ভাবছেন, তাদের জন্য মাশরাফির আছে মোক্ষম জবাব।
প্রশ্ন ছিল, বেশিরভাগ সময় দেখা গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আপনার দলের বোলিং সূচনা করেছেন অফস্পিনাররা এবং তাতে সাফল্যও এসেছে। কিন্তু কাল যে সমারসেট কাউন্টি ক্লাবের ছোট আউটফিল্ডে খেলা, সেখানে কি অফস্পিনার খেলানো ঝুঁকিপূর্ণ নয়? কালকের ম্যাচে আপনার কৌশলে আসবে নতুন কিছু?
এমন প্রশ্ন করে বসলেন এক ভিনদেশী সাংবাদিক। তাকে মাশরাফির জবাব, ‘আসলে ইতিহাস বলছে আমরা অতীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে ওপেনার এবং টপ অর্ডারদের বিপক্ষে বেশিরভাগ সময় অফস্পিন দিয়ে শুরু করে সফল হয়েছি। আর এবার বিশ্বকাপেও মিরাজ ভাল বল করছে। প্রায় প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষের সমীহ আদায় করে নিয়েছে। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং লাইন আপে পাঁচজন বাঁহাতি আছে। সে আলোকে একজন অফস্পিনার থাকার যৌক্তিকতা আছে। কাজেই মিরাজ অবশ্যই চিন্তাভাবনা আর বিবেচনায় আছে।’
অধিনায়ক যখন এমন কথা বলেন, তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না কাল ঠিকই মিরাজ খেলবেন। এবং হয়ত নতুন বলে বোলিংও করবেন। আর মাশরাফি বারবার বলেছেন, ‘আমরা মাঠের আকার আয়তন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। আমাদের চিন্তা চেতনা ও ভাবনায় মাঠ ও মাঠের আকার আয়তন নেই। ছোট-বড় আউটফিল্ড কোন বড় ফ্যাক্টর না। আসল ও শেষ কথা হলো আমাদের ভাল খেলতে হবে।’
Advertisement
মাঠের আকার নিয়ে অনেক জল্পনাকল্পনার অবসানে মাশরাফি আজ দিলেন এক অন্যরকম দাওয়াই। একদম ক্রিকেটীয় যুক্তি দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ছোট মাঠ কোন চিন্তার কারণ নয়। আউটফিল্ড ছোট হলে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের লাভ হবে, এমন ভাবতে নারাজ মাশরাফি।
তার ব্যাখ্যা, ‘মাঠ ছোট হওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদেরই শুধু কেন, আমার তো মনে হয় ছোট মাঠ হওয়ায় বরং আমাদের ব্যাটসম্যানদেরই সুবিধা হবে (খানিক হেসে একটু রসিকতার সুরে)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা যে বিগ হিটে পটু, পাওয়ার হিটিংয়ে মাস্টার। তা সবার জানা। পৃথিবীর সব বড় মাঠেই ছক্কা হাঁকাতে পারে। মাঠ ছোট হওয়ায় তাদের যে খুব বেশি সুবিধা হবে- এমন নয়।’
মাঠ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মাশরাফি শেষ করেন এভাবে, ‘আমি জানি ওয়েস্ট ইন্ডিজও কালকের ম্যাচে তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে। কিন্তু আমি ভাবছি আমার মত। আমরা অতীতে আমাদের নিজের শক্তিসামর্থ্য দিয়ে নিজেদের মত করে খেলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছি। কালকের ম্যাচে সেটাও বিশেষ বিবেচনায় থাকবে।’
শেষ দুই লাইন ভাল করে লক্ষ করুন, আমরা আগেও নিজেদের শক্তিসামর্থ্য দিয়ে নিজেদের মত করে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছি আর কালকের ম্যাচে সেটাও থাকবে বিশেষ বিবেচনায়।
বাংলাদেশ অতীতে নিজেদের মত করে খেলেই জিতেছে মানে অফস্পিন দিয়ে বোলিং শুরু হয়েছে। আর যেহেতু ওপেনার ও টপ অর্ডারে অনেকগুলো বাঁহাতি ক্যারিবীয়দের। তাই সেই পথে হাটা মানেই মিরাজকে দিয়ে বোলিং শুরু, এ বিষয়ে রয়েছে আর কোনো সংশয়-সন্দেহ?
এআরবি/এসএএস