২০১৯-২০ প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধিকে ‘হতাশাজনক’ উল্লেখ করে আরও দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্রজ্ঞা’ ও ‘আত্মা’।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট উত্থাপনের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠন দুটি এ দাবি জানায়।
এতে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নস্তরে সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে শলাকাপ্রতি মাত্র ২০ পয়সা বা ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ এ সময়ে জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। সিগারেট ধূমপায়ীর প্রায় ৭২ শতাংশই নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা। প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর হলে এ স্তরের সিগারেটের প্রকৃত মূল্য হ্রাস পাবে এবং ব্যবহার বাড়বে। এদিকে বাজেট প্রস্তাবনায় মূল্যস্তরভেদে সিগারেট কোম্পানিগুলোকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত আয় বাড়ানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিড়ির শলাকাপ্রতি ৬ পয়সা দাম বৃদ্ধি এর ব্যবহার কমাতে কোনো ভূমিকাই পালন করবে না। তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু এবং অসুস্থতার বোঝা মাথায় নিয়ে তামাক কোম্পানিগুলোকে লাভবান করার এই বাজেট প্রস্তাবনা চরম হতাশাজনক এবং একইসঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিরোধী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক নীতি গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান দিলেও, ওই নির্দেশনার কোনো প্রতিফলন প্রস্তাবিত বাজেটে নেই, যা সার্বিকভাবে তামাকবিরোধীদের জন্য হতাশাজনক বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
Advertisement
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের দাম মাত্র ২ টাকা বাড়িয়ে ৩৭ টাকা নির্ধারণ এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, যা খুবই হতাশাজনক। এর ফলে প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম বাড়বে মাত্র ২০ পয়সা। সিগারেট ধূমপায়ীর প্রায় ৭২ শতাংশই এই নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা। জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে নিম্নস্তরের সিগারেটের এই অতি সামান্য মূল্যবৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতার কোনো পরিবর্তন হবে না। একইসঙ্গে ধূমপান শুরু করতে পারে, এমন তরুণ প্রজন্মকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করা যাবে না।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যম, উচ্চ এবং প্রিমিয়াম স্তরে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে শুধু মূল্য পরিবর্তনের মাধ্যমে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম যথাক্রমে ৬৩ টাকা, ৯৩ টাকা এবং ১২৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপে বিগত বছরের তুলনায় মূল্যস্তরভেদে তামাক কোম্পানিগুলোর আয় ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। ফলে, বিশেষত বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো এবারের বাজেটে ব্যাপকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এভাবে তামাক কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তামাকবিরোধীদের দীর্ঘদিনের দাবি সিগারেটের স্তরসংখ্যা হ্রাস ও সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি প্রচলনের কোনো নির্দেশনা এবারের বাজেট ঘোষণাতেও নেই। স্তরসংখ্যা অপরিবর্তিত রাখায় ভোক্তার সিগারেট স্তর পরিবর্তনের সুযোগ থেকে যাবে।
জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিড়ির ব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা থাকলেও, তা বাস্তবে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় উঠে আসেনি বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে ফিলটারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির মূল্য দুই বছর পর মাত্র দেড় টাকা বাড়িয়ে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বৃদ্ধি খুবই কম এবং এর ফলে প্রতি শলাকা বিড়ির দাম বাড়বে মাত্র ৬ পয়সা। বিড়ির প্রধান ভোক্তা নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের ওপর এই সামান্য মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বে না। বিড়ির সম্পূরক শুল্ক বিগত তিন বছর অপরিবর্তিত রাখার পর ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে বিড়ি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় কিছুটা বাড়বে।
এমএসএইচ/এমএস
Advertisement