নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থানান্তরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা রিটের শুনানি সময়ক্ষেপণ বলে মন্তব্য করেছেন ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মুরাদ রেজা। তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সময়ের পর সময় নিয়েছেন তারা (খালেদার আইনজীবীরা)। আরও সময়ক্ষেপণ করার জন্য এখন এই রিট করেছেন।
Advertisement
মঙ্গলবার দুপুরে খালেদা জিয়ার আদালত স্থানান্তরের বিষয়ে করা রিটের শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যার্টনি জেনারেলের কার্যালয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থানান্তরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা রিটের শুনানি নিয়মিত বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন বেঞ্চ বিষয়টি শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
Advertisement
আদালতে আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী। তাদের সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আমিনুর রহমান, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, নওশাদ জমির, মীর হেলাল, এ কে এম এহসানুর রহমান ও ফাইয়াজ জিবরান প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
শুনানি শেষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেরানীগঞ্জ একটা উপজেলা। এটা মেট্রোপলিটন এরিয়ার বাইরে। এ ধরনের কোনো আদেশ ন্যায়সঙ্গত নয় এবং সংবিধানপরিপন্থী বলে আমরা মনে করি। এজন্য আমরা রিট ফাইল করেছিলাম এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটা শুধু বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপার নয়, আইনের ব্যাখ্যার বিষয় রয়েছে যে, মেট্রোপলিটন এরিয়ার মামলা মেট্রোপলিটন এরিয়ার বাইরে বিচার হতে পারে কি পারে না।’
তিনি বলেন, ‘কোর্টের চাওয়াতে আজকে আমরা একটি সম্পূরক হলফনামা আকারে দিয়েছিলাম। কিন্তু আজকে দেখা গেল আরও কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন। বিশেষ করে আদালত স্থানান্তরের অরিজিনাল গেজেট নোটিফিকেশনটি। এটা জোগাড় করতে চেষ্টা করেছি কিন্তু পাইনি। এটা সরকারের কাছে আছে। আশা করি সরকার এটা আমাদের দেবেন।’
Advertisement
খালেদার এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘এটা কোনো রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা নয়। এটা এমন কোনো হাই-সিকিউরিটির মামলা নয় যে, এটার জন্য আলাদা করে আদালত স্থানান্তর করতে হবে।’
সময়ক্ষেপণ প্রসঙ্গে মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘আদালত একটা আদেশ দিয়েছন, যেহেতু কাগজপত্রগুলো আমাদের দেয়া দরকার এবং যেহেতু এটিতে আইনের কিছু বিষয় আছে, তাই এটার বিশদ আলোচনা প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে হলো ভেকেশন বেঞ্চের শেষ দিন। কোর্টও এটি একটি নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।’
আদালত স্থানান্তর প্রসঙ্গে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ১২ মে এক গেজেটে কেরানীগঞ্জে একটা বিশেষ আদালত সৃষ্টি করা হয়। সেখানে খালেদা জিয়াসহ অন্যান্যদের মামলা শুনানির ব্যবস্থা করা হয়। আদালতটি পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরের আদালত থেকে অনেকটা কারাগারের বাইরে। এটি কেরানীগঞ্জের কারাগারের পেরিফেরি এলাকার বাইরে। আদালতটি দুই হাজার বর্গফুট আয়তনের। যেখানে ২২টি বেঞ্চ বসানো আছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও আছে। তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) এর আগেও নতুন এই আদালতে শুনানি করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আদালত স্থানান্তরের গেজেট হয়েছে ১২ মে। এই গেজেট হওয়ার পরও দুই দিন তারা সেখানে গিয়েছেন, শুনানি করেছেন। এরপর এসে তারা রিট করেছেন। গত ২৮ মে তারা রিটের শুনানি করেছেন। ওই দিন অ্যাডজাসটিভ একটা শুনানি হয়েছিল। তখন আদালত তাদেরকে বলেছিলেন, আপনারা আদেশের কপিগুলো আনেন। তখন তারা সময় নিয়ে রোববার (১০ জুন) এভিডেভিট করার জন্য আবারো সময় নেন। আজকে সেই অর্ডারশিটগুলো আদালতে প্রডিউস করলেন। আজ আদালতে দাড়িঁয়ে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী সাহেব শুনানি করলেন। কিন্তু শুনানিতে তিনি বলতে পারছিলেন না, তিনি কি রুল শুনানি করছেন, না সময় চাচ্ছেন। ওনি বললেন, আমার আরও বক্তব্য আছে। এ সময় কোর্ট বললেন, তাহলে আপনারা ভেকেশন বেঞ্চে আসলেন কেন, আপনাদের আসাই উচিত ছিল না। তখন ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেব দাঁড়িয়ে বললেন, এ কেসটা আরেক কোর্টে যাক। সেখানে ওনারা শুনানি করবেন। এখানে বোঝা গেল খালেদা জিয়ার আইনাজীবীদের মধ্যে একটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সিদ্ধান্তহীনতার বিষয় ভেসে উঠেছে। এ কারণে আদালত মামলাটি রেগুলার বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।’
মুরাদ রেজা আরও বলেন, ‘এখানে দেখা যাচ্ছে, ওনারা যেটা তুলে ধরতে চেয়েছেন সেটা হলো এটা মেট্রোসেশন কেস। আসলে এটা কিন্তু মেট্রোসেশন কেস না। এটা ছিল স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের কেস। স্পেশ্যাল জাজের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। সেই অবস্থায় এটা স্থানান্তর হয়েছিল ২০০৮ সালের ২০ মে। এ পর্যন্ত সময়ের পর সময় নিয়েছেন তারা। ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত মামলাটি আমরা চার্জ ফ্রেমিংই করতে পারিনি। বিভিন্ন উছিলায় তারা কোর্টে আসছে, সময় নিচ্ছেন। আজকেও তারা সময় নিয়েছেন। আমার মনে হয়, এটা তারা সময়ক্ষেপণ করার জন্যই করছেন।’
এটাকে তারা (খালেদার আইনজীবীরা) সাবজুডিস (বিচারাধীন) বলে উল্লেখ করেছেন। এ অবস্থায় মামলা চলবে কিনা জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘এখানে আজকে রুল হয়নি, সুতরাং বিচারিক আদালতে বাধা থাকারতো কোনো প্রশ্নই আসে না। আজকে যদি রুলও হতো, কোনো স্টে (স্থগিত) না থাকত তাহলেও এ মামলার চলার ব্যাপারে কোনো বাধার সৃষ্টি হতো না বলে আমি মনে করি।’
নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য বিশেষ আদালত পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগার থেকে সরিয়ে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়ার সরকারি আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়। আদালত স্থানান্তরে জারি করা সরকারের প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবীরা গত ২৬ মে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন। এরপর ২৮ তারিখ শুনানি শেষে আজ ১১ জুন আবারো শুনানি শেষে নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন হাইকোর্ট।
এফএইচ/এসআর/আরআইপি