বারবার নানা বিতর্কে জড়িয়ে আলোচনায় উঠে আসছেন সিলেটের গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের ওসি আব্দুল জলিল। নিজ থানা এলাকার মন্ত্রীকে উপঢৌকন পাঠানো, ঘুষ, দুর্নীতি, সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে পুরনো। এবার ওসি আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যা করেছেন পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই)।
Advertisement
রোববার গোয়াইনঘাট থানার এসআই সুদীপ বড়ুয়ার (৪৫) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। সুদীপের পরিবারের অভিযোগ, ওসি জলিলের দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়েই সুদীপ আত্মহত্যা করেন।
এই ঘটনার আগেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আলোচনায় উঠে আসে আব্দুল জলিলের নাম। এর আগে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার উপস্থিতে ওই এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এছাড়া দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় ওসি আব্দুল জলিলকে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বদলি করা হয়। সেখান থেকে আব্দুল জলিল ২০১৮ সালের ২৭ মে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার দায়িত্ব নিয়ে যোগদান করেন।
গত জাতীর নির্বাচনে জয়ী গোয়ানইঘাট-জৈন্তাপুর-কোম্পানিগঞ্জ এলাকা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসনের সাংসদ নির্বাচিত হন ইমরান আহমদ। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ইমরান। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে গোয়ানঘাটে নিজ এলাকায় আসার পর গত ১৬ জানুয়ারি রাতে ইমরান আহমদের বাসায় ট্রাকভর্তি বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী পাঠান গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল জলিল। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন আব্দুল জলিল। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই ট্রাক দেখে ক্ষুব্ধ হন প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ। সঙ্গে সঙ্গে তিনি খাদ্যসামগ্রী সমেত ট্রাক পাঠিয়ে দেন ওসির কাছে।
Advertisement
নানা সময়ে নানা বিতর্কে জড়ানো ওসি আব্দুল জলিল এবার বিতর্ক সৃষ্টি করছেন নিজ ডিপার্টমেন্টে। সর্বশেষ তার দুর্ব্যবহার সইতে না পেরে গোয়াইনঘাট থানার এক পুলিশ অফিসার আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার (২ জুন) বেলা আড়াইটার দিকে লাশটি গোয়াইনঘাট থানার অভ্যন্তরের কোয়ার্টার থেকে উদ্ধার করা হয়।
নিহত সুদীপের মেয়ে শতাব্দি ওসি আব্দুল জলিলকে অভিযুক্ত করে বলেন, থানায় মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হয়ে বাবা আত্মহত্যা করেছেন। বাবা প্রায়ই ফোন করে বলতেন। সর্বশেষ শনিবারও বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি তখনও বলেছেন, এ থানায় তিনি আর থাকতে চান না। ওসি সাহেব বাবার সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করতেন। গালাগালি করতেন। আমার বাবা ভদ্র মানুষ। এসব গালি নিতে পারেন না। পরশু রাতেও ওসি সাহেব বাবাকে ইচ্ছামত গালি দিয়েছেন। আমার বাবাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হত। ওই ওসি দুনিয়ার সব অবৈধ কাজ করতেন। এগুলো আমার বাবা সহ্য করতে পারতেন না। আমার বাবা একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তা।
এসআই সুদীপের স্ত্রী ববি বড়ুয়া বলেন, আমার স্বামী সর্বদাই বলতেন গোয়াইনঘাট থানার ওসি তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। দিনরাত চাপের মধ্যে রাখেন। ঘুমাতেও দিতেন না। একটু ঘুমাতে গেলে আবার ডেকে এনে কাজ দিয়ে ধমক দেন, গালাগালি করেন। তিনি (ওসি) আমার স্বামীকে সহ্য করতে পারতেন না। সারাক্ষণ চাপে রাখতেন। ওই ওসির দুর্ব্যবহার সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গোয়ানঘাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল। ওসি বলেন, অভিযোগ ঠিক নয়। কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা তদন্ত করে দেখা হবে।
Advertisement
অভিযোগ রয়েছে শ্রীমঙ্গল থানায় থাকা অবস্থায় ওসি আব্দুল জলিল নানা অনিময়ের সংবাদ প্রকাশ করায় স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল ইসলামকে হুকমি দেন। এই সাংবাদিককে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে বলেন, লেখনী অব্যাহত থাকলে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে আটকে রাখবেন ও পুলিশ রিমান্ডে এনে উচিত শিক্ষা দেবেন। কেবল হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হননি, এই সাংবাদিককে মিথ্যা মামলা দিয়ে থানায় এনে নির্যাতনও করেন।
এসব অভিযোগে ২০১৫ সালে মৌলভীবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ওসি আব্দুল জলিলকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রুমি বেগম।
এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. মাহবুবুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ওসি আব্দুল জলিলের পূর্বের ঘটনা না টেনে বর্তমানে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা সম্পর্কে কথা বলা যায়। নিহতের মেয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। সে বলেছে তার বাবা কাজের চাপে ছিলেন।
তিনি বলেন, এই থানা অনেক বড়, তাই সেখানে কাজের চাপ ছিল। তবে ওসি তাকে আলাদাভাবে কোনো চাপ দেয়নি। চাপ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আত্মহত্যাকারী ওই পুলিশ সদস্য অত্যন্ত সৎ ছিলেন। একজন সৎ পুলিশ অফিসারকে হারিয়ে আমরা মর্মাহত।
এফএ/পিআর