দলকে শক্তিশালী করতে ব্যর্থদের সরিয়ে নতুন নেতৃত্বের তাগিদ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদে যোগ দেয়ায় দলের সর্বস্তরে বিভ্রান্তি এবং ক্ষোভ তৈরি হয়েছে জানিয়ে এ পরিস্থিতি দূর করার জন্য নির্বাহী কমিটির সভা ডাকার আহ্বানও জানান তিনি।
Advertisement
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান মওদুদ আহমদ।
মওদুদ বলেন, ‘এখন বিএনপির জন্য বিরাট সংকটকাল। আমাদের নেত্রী অসুস্থ এবং কারাগারে। আমি এতটুকু বলতে চাই, আজকে না হয় কালকে খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন এবং আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি এই মুহূর্তে কারাবন্দি। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না, আমরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। তিনি আমাদের নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। তারেক রহমান ৮ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন। আর দেশে চলছে একদলীয় নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসন। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সর্বক্ষেত্রে ঐক্য বজায় রাখা।’
তিনি বলেন, আমরা যারা আছি, আমাদের নেতা মানেন আর নাই মানেন, আমরা যদি ব্যর্থ হয়েও থাকি, আর নাও হয়ে থাকি। ব্যর্থ হয়ে থাকলে আমাদের সরিয়ে নতুন নেতৃত্বের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু দলটাকে শক্তিশালী রাখতে হবে।
Advertisement
বিএনপির নির্বাচিতরা সংসদে যোগ দেয়ায় দলের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘যেই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি, সংসদকে অবৈধ বলেছি, সেই সংসদে যোগ দেয়ার কারণে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এই ধরনের ক্ষোভ থাকা ভালো নয়। এই ক্ষোভ যদি দূর করতে না পারি তাহলে জাতীয়ভাবে রাজনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব না। আমাদের কোটি কোটি সমর্থক থাকবে, সমর্থন থাকবে, কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি যদি সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে না পারি, পরিচালনা করতে না পারি তাহলে আমরা শহীদ জিয়ার এই দলকে সুসংগঠিত করতে পারব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন পরবর্তীতে দলীয়ভাবে ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছি এবং সংসদকে অবৈধ উল্লেখ করেছি। এজন্য আমরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের আমরা বহিষ্কার করেছি। গত নির্বাচনে ৩০০ আসনে হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। তারা জেল খেটেছেন, আহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন এমনকি অনেকে মৃত্যুবরণও করেছেন। হঠাৎ করে এই সংসদে যোগদানের কারণে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাট ক্ষোভ এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে বিএনপির অবস্থান নিয়ে শত শত প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের দিতে হবে। যদি আমরা দিতে পারি, তবে আমরা এই সংগঠনকে আরও অনেক বেশি সংঘবদ্ধ করতে পারব।’
দলকে সুসংগঠিত করার তাগিদ দিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘অবিলম্বে আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জিয়ার দলকে সুসংগঠিত করার জন্য অবিলম্বে ছাত্রদল, যুবদল, জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং দলটির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, যুবদলের মোরতাজুল করিম বাদরু, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
Advertisement
কেএইচ/এসআর/এমএস