জামালপুরের নকশী কাঁথা, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন নকশী পণ্যের সুনাম ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটেছে এখানকার হাতে তৈরি নকশী শিল্পের। সারা বছর এসব নকশী পণ্যের চাহিদা থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে চাহিদা বেড়েছে। ঈদে নকশী পণ্যের বিপুল চাহিদা মেটাতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার প্রায় ৫০ হাজার সূচিশিল্পী।
Advertisement
জানা যায়, জেলায় প্রায় ৫০ হাজার নারী জড়িত সূচিশিল্পের সাথে। তাদের নিপুণ হাতে সুঁই-সুতার বুননে তৈরি করেন নানা রকম নকশী পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- নকশী কাঁথা, বিছানার চাদর, কুশন কভার, ওয়ালম্যাট, শাড়ি, কামিজ, ওড়না, টু-পিস, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ইত্যাদি। নকশী পণ্যে দেখা যায় রঙের খেলা। প্রথমে একটি পণ্য তৈরির জন্য বেছে নেওয়া হয় নির্দিষ্ট রঙের কাপড়, পছন্দনীয় নকশা, মানানসই এক বা একাধিক রঙের সুতা।
অনেক ক্ষেত্রে একই নকশায় ভিন্ন রং, ভিন্ন কাপড় ও সুতার ব্যবহার করা হয়। এতে নকশী পণ্যে আসে ভিন্নতা। তারপর বাছাই করা কাপড়ে নির্দিষ্ট একটি রং ব্যবহার করে ট্রেচিং বা স্ক্রিন প্রিন্টের সাহায্যে নকশার ছাপ দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় সেই ছাপ দেওয়া নকশার ওপর সুনিপুণ হাতের সূচিকর্ম। এভাবেই ধীরে ধীরে তৈরি হয় একেকটি নকশী পণ্য। আর নকশী পণ্য বুননের সাথে সাথে আপন মনে রঙিন স্বপ্ন বুনে যান সূচিশিল্পীরা।
> আরও পড়ুন- ফেসবুকে ঝড় তুলেছে ছোট্ট সাম্যর গান
Advertisement
স্থানীয়রা জানান, এখানকার নকশী পণ্য ইতোমধ্যে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রাজশাহীসহ দেশের সব বড় শহরের বাজার দখল করেছে। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও জামালপুরের নকশী পণ্যের কদর দিন দিন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে এসব পণ্য। তবে ঈদকে সামনে রেখে এখানকার নকশী পণ্যের বিপুল চাহিদা মেটাতে এখন দিন-রাত ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে কর্মীদের। বাড়তি দু’পয়সা আয়ের জন্য রাত জেগেও কাজ করছেন তারা।
পণ্যের বিপুল চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মাঝারি উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, ‘সুতা ও কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে দাম রয়েছে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই। বিক্রিও হচ্ছে বেশ ভালো।’
উদ্যোক্তারা জানান, এবার জামালপুরের নকশী কাঁথা বিক্রি হচ্ছে ৩-৭ হাজার টাকা, বেড কভার ১২শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা, কুশন কভার ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা, পিলো কভার ৫শ’ থেকে ১৭শ’ টাকা, শাড়ি ১৫শ’ থেকে ১০ হাজার টাকা, পাঞ্জাবি সুতি ৮শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা, সিল্ক ১৫শ’ থেকে ৩৫শ’ টাকা, থ্রি-পিস ৮শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা, টু-পিস ৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা, ফতুয়া ৩শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা, কটি ৪শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, ওয়ালম্যাট ৪শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা, ব্যাগ ১৫০ থেকে ৫শ’ টাকা, পার্স ২৫ থেকে ৩শ’ টাকা, শিশুর ফ্রক ৩শ’ থেকে ৭শ’ টাকা।
> আরও পড়ুন- স্কুটি বদলে দিয়েছে পাহাড়ি নারীর পথচলা
Advertisement
সূচিশিল্পী হেলেনা, সেতার, শমোলা, রাশেদা বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে কাজের চাপ খুব বেড়ে যায়। আমরাও চেষ্টা করছি দিন-রাত পরিশ্রম করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ তুলে দিতে। এতে আমাদের বাড়তি কিছু আয় হবে। যা দিয়ে ঈদ উপলক্ষে ছেলে-মেয়ের জন্য নতুন কাপড়-চোপড় কিনে দিতে পারব। এছাড়া অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে পারব।’
নবম শ্রেণির ছাত্রী লামিয়া ও তৃপ্তি জানান, তাদের মতো অনেকেই নিজের খরচ মেটানোর জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি হাতের কাজ করেন। ঈদের আগে দু’পয়সা পাওয়ার আশায় বন্ধের সময়কে পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছেন তারা।
জামালপুর জেলা হস্তশিল্প ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি দেলোয়ারা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশ-বিদেশে জামালপুরের হস্তশিল্পের ব্যাপক কদর রয়েছে। আর ঈদের জন্য আমাদের ব্যস্ততা অনেক বেশি। সময়মতো কাজ তুলে দিতে কর্মীরাও দিন-রাত কাজ করছে।’
আসমাউল আসিফ/এসইউ/পিআর