ঝিনাইদহের শৈলকুপার ৬নং সারুটিয়া ইউনিয়নের নাদপাড়া গ্রামে প্রায় তিন হাজার মানুষের বসবাস। ওই গ্রামের দীর্ঘ দুই কিলোমিটার রাস্তা ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। ফলে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েন গ্রামবাসী। বর্ষায় অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিতে ও গ্রামের স্কুলসহ আশপাশের কলেজে যেতেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
Advertisement
দুর্ভোগ দূর করার জন্য গ্রামবাসী রাস্তাটি নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপিসহ বিভিন্ন দফতরে ধর্না দিলেও রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে কোনো সাড়া মেলেনি। তাই নিজেদের সমস্যা সমাধানে নিজেরাই এগিয়ে এলেন। নেমে পড়লেন নিজেদের অর্থ ও স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা পাকা করার কাজে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এ রাস্তাাটি ইটের খোয়া আর বালু বিছিয়ে বর্ষায় যাতায়াতের উপযোগী করতে চাইছেন গ্রামবাসী। বাজেট আড়াই লাখ টাকা। গ্রামের শিক্ষক, ছাত্র, কৃষকসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় এ রাস্তা সংস্কারের কাজে যোগ দিয়েছেন।
রাস্তা সংস্কার কাজে ব্যস্ত গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান আমাদের এই দুরবস্থার বিষয়ে অবহিত থাকলেও রাস্তা সংস্কারে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অনেকবার গিয়েছি স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপিসহ বিভিন্ন দফতরে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সামনের বর্ষায় যাতে ঘর থেকে বের হয়ে সবাই যার যার কাজে যেতে পারি এ কারণে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
Advertisement
নাদপাড়া গ্রামের স্কুল মোড় থেকে পশ্চিমের এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার লোকের যাতায়াত। নাদপাড়া, ভাটবাড়িয়া ও ভুলুন্দিয়ার একটি অংশের শিক্ষার্থীরা স্কুল ও মাদরাসায় যাতায়াত করে এ সড়কটি দিয়ে।
নাদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শৈলকুপা ফাজিল মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক রেজাউল ইসলাম বলেন, গ্রামের এ রাস্তাটিতে বর্ষার সময় খুব কাদা হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ১০ বছর ধরে আমরা এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। তাই শেষে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছি রাস্তাটি মেরামত করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমরা রাস্তায় বালু দিয়েছি। তারপর ইটের খোয়া। এরপর আবার বালু দেয়া হচ্ছে। রোলার দিয়ে সমান করতে না পারলেও গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি চলতে চলতে এটি সমান হয়ে যাবে। নাদপাড়া গ্রামের স্কুল মোড় থেকে পশ্বিমপাড়া ঈদগাহ পর্যন্ত মাঠের রাস্তা ও সাংবাদিক আব্দুল মান্নানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার এ কাজ চলবে। গ্রামের একটি অংশের সবাই আর্থিক ও শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করছেন বলেও তিনি জানান।
নাদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কাতলাগাড়ী কলেজের সহকারী অধ্যাপক কবির বিশ্বাস বলেন, এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন গ্রামসহ চরআউশিয়া, নাদপাড়া গ্রামের কলেজ ছাত্ররা কাতলাগাড়ীতে যাতায়াত করে। বর্ষার সময় নাদপাড়া গ্রামের শিক্ষার্থীরা এ রাস্তা দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেতে পারে না। তাই বর্ষা আসার আগেই নিজেরাই রাস্তাাটি মেরামত করতে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন।
Advertisement
স্থানীয় ইউপি সদস্য ওয়াজেদ আলী বলেন, রাস্তাটি বর্ষা মৌসুমে চলাচলের উপযোগী থাকে না। তাই গ্রামবাসী বর্ষা মৌসুমের আগে নিজেরাই রাস্তার তৈরির কাজ করছেন। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এ রাস্তাটি দ্রুত মেরামতের চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/আরএআর/পিআর