দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সোমবার লেনদেনে অংশ নেয়া ৫০ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পর, বাজারটির প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও। আগের কার্যদিবসের মতো এদিনও ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর কল্যাণে পতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে মূল্য সূচক।
Advertisement
তিন মাসেরও বেশ সময় ধরে দেশের শেয়ারবাজারে মন্দাভাব থাকায় সম্প্রতি সরকারের ওপর মহলের নির্দেশে পুঁজিবাজারের জন্য বেশকিছু ভালো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকের এক্সপোজারে সংশোধনী এনে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারসহ বিভিন্ন অংশীজনের মতামত এবং পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তালিকাভুক্ত নয় এ রূপ সিকিউরিটিজে ব্যাংকের বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে ব্যাংকের মোট বিনিয়োগ হিসাবায়নে অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রজ্ঞাপনের ফলে এখন থেকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের (একক ও সমন্বিত) বিনিয়োগ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে নন-লিস্টেড কোম্পানির অর্থাৎ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানের ইক্যুইটি শেয়ার, নন-কনভার্টেবল প্রিফারেন্স শেয়ার, নন-কনভার্টেবল বন্ড, ডিবেঞ্চার, ওপেন-ইন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকে ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ (ক্যাপিট্যাল মার্কেট এক্সপোজার) হিসেবে গণ্য করা হবে না।
Advertisement
ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে এমন পদক্ষেপ নেয়ায় পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এমনটাই আশা করছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বাস্তবে সার্বিক শেয়ারবাজারে তার খুব একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এক্সপোজার সংশোধনী সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর এক কার্যদিবস বড় উত্থানের দেখা মিললেও মূলত এখনও পতনের মধ্যেই রয়েছে শেয়ারবাজার।
সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৫টির এবং দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৫টির। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের এই দাম কমার মধ্যেও ১৬টি ব্যাংকের শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮টি ব্যাংকের।
বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় দশমিক ২১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসইর-৩০ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮২৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। তবে পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ডিএসই শরিয়াহ সূচক। এ সূচকটি আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৯৯ পয়েন্টে।
এদিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মধ্যে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৫১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩২৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
Advertisement
বাজারটিতে টাকার পরিমাণে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকার লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে নিউ লাইন ক্লথিংস এবং ১২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লেনদেনে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- ইস্টার্ণ কেবলস, উত্তরা ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, ব্র্যাক ব্যাংক, মুন্নু সিরামিক, রানার অটোমোবাইল এবং ফরচুন সুজ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএসসিএক্স ১৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬৯৫ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকার। লেনদেন অংশ নেয়া ২৩৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৪টির, কমেছে ১০৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৫টির।
এমএএস/এমএসএইচ/এমকেএইচ