দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে রুই জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ) মা মাছ ডিম ছেড়েছে। শনিবার (২৫ মে) রাত সাড়ে ৯টার পর থেকে হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম পাওয়ার খবর আসতে থাকে।
Advertisement
তবে এর আগে শনিবার ভোর থেকেই হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা সংলগ্ন নদীর বিস্তীর্ণ অংশের বিভিন্ন স্থানে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ছিল।
মা-মাছের ডিম ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া ও হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন।
হাটহাজারীর উত্তর মাদরাসার ডিম সংগ্রহকারী মো. জামশেদ জাগো নিউজকে বলেন, শনিবার সারাদিন হাটহাজারী ও রাউজান অংশের হালদা নদীর বিভিন্ন ঘাটে নমুনা ডিম পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আস্তে আস্তে নদীর আজিমের ঘাট, অঙ্কুরীঘোনা, মদুনাঘাট, বাড়িয়াঘোনা, মাছুয়াঘোনা হাট, সিপাহীর ঘাট, গড়দুয়ারা এলাকায় ডিম সংগ্রহকারীরা ভালোভাবে ডিম পাওয়ার খবর দিতে থাকেন।
Advertisement
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মাছ। রাত সাড়ে ৯টার কিছু পর থেকে থেকে হালদার বিভিন্ন অংশে ডিম সংগ্রহ শুরু হয়। পুরো নদীতে প্রায় ৪০০ ডিম সংগ্রহকারী ডিম সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রথম তিন-চার ঘণ্টায় প্রত্যেকে ২০-২৫ কেজি করে ডিম সংগ্রহ করেছেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হলে নদীর পাড়ে অবস্থান নেন ডিম আহরণকারীরা। প্রবল বর্ষণের ফলে হালদার সঙ্গে সংযুক্ত খাল, ছড়া ও নদীতে ঢলের সৃষ্টি হয় এবং রুই জাতীয় (রুই, মৃগেল, কাতল, কালিবাউশ) মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে।
সাধারণত, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে প্রবল বর্ষণ হলে মা মাছ ডিম ছাড়ে। কিন্তু এবার বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকায় ঢলের প্রকোপ হয়নি। বৈশাখ মাসের মাঝামাঝিতে নদীতে মা মাছ অল্প ডিম ছেড়েছিল। মা মাছ সাধারণত অমাবস্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে ডিম ছাড়ে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মা মাছ সংরক্ষণ, ডিম থেকে রেণু তৈরির কুয়া সংস্কার, কুয়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগের কারণে হালদায় ডিম সংগ্রহের পরিমাণ এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।
Advertisement
তিনি জানান, হালদা থেকে ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে এক হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি (নমুনা ডিম), ২০১৫ সালে দুই হাজার আটশ’ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার পাঁচশ’ কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়।
আবু আজাদ/জেডএ