বিনোদন

নাটক ও সিনেমায় নজরুলের সৃষ্টি

নিজে সরাসরি প্রায় ২০টিরও বেশি চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরিচালনা করেছেন, অভিনয় করেছেন, গান লিখেছেন-সুর করে গেয়েছেনও। ১৯৪২ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে সক্রিয় ছিলেন নজরুল।

Advertisement

১৯৪১ সালে শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের পৃষ্ঠপোষকতায় নজরুল ‘বেঙ্গল টাইগার্স পিকচার্স’ নামে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন আব্বাসউদ্দীন আহমদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, হুমায়ূন কবীর, এস ওয়াজেদ আলী, মোহাম্মদ মোদাব্বের, আজিজুল ইসলাম,সারওয়ার হোসেন, আজিজুল হক প্রমুখ।

১৯৪২ সালে নজরুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। মস্তিষ্কের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ৩৪ বছর বাকরুদ্ধ ছিলেন তিনি। সেই প্রতিষ্ঠানটির কাজ বেশিদূর এগোয়নি আর।

চিকিৎসাধীন থেকে ১৯৭৬ সালে কবির মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। নজরুলের অসুস্থতার সময় এবং মৃত্যুর পর অনেক সিনেমায় তার গান ব্যবহার করা হয়েছে।

Advertisement

তারমধ্যে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমায় ‘পথহারা পাখি কেঁদে ফেরে একা’ গানটির উল্লেখ করা যায়। নজরুলসংগীত অত্যন্ত সার্থকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল সেখানে। একইভাবে ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটির ব্যবহার ছিল অসাধারণ।

‘লায়লা-মজনু’ সিনেমায় ‘লাইলি তোমার এসেছে ফিরিয়া, মজনু গো আঁখি খোলো’ গানটির সার্থক ব্যবহার দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এমন আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে চলচ্চিত্রে নজরুলের গানের সফল ব্যবহারের।

পরবর্তীকালে নজরুলের গল্প ও উপন্যাস নিয়ে প্রচুর টিভি নাটক-টেলিফিল্ম ও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থায়নে ১৯৫৬-৫৭ সালে নির্মিত হয় ‘বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম’।

১৯৭০ সালে পাকিস্তান চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের প্রযোজনায় নির্মিত হয় ‘বিদ্রোহী কবি’। ১৯৭২ সালে ভারত সরকারের প্রযোজনায় নির্মিত হয় ‘কাজী নজরুল ইসলাম’।

Advertisement

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৮০-৮১ সালে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের প্রযোজনায় নির্মিত হয় ‘কবি নজরুল’। বিবিসি টিভি চ্যানেল ফোর থেকে নির্মিত হয় ‘কাজী নজরুল ইসলাম’। কানাডার চলচ্চিত্র পরিচালক ফিলিপ স্পারেল নির্মাণ করেন তথ্যচিত্র ‘নজরুল’।

নজরুলের ‘মেহেরনেগার’ গল্প অবলম্বনে ২০০৬ সালে ঢাকায় যৌথভাবে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন মুশফিকুর রহমান গুলজার ও মৌসুমী। চলচ্চিত্রে প্রধান দুই চরিত্র কাশ্মীরের তরুণী মেহের নেগারের চরিত্রে মৌসুমী এবং আফগান যুবক ইউসুফের ভূমিকায় ফেরদৌস অভিনয় করেন।

নজরুলের গল্প ‘রাক্ষুসী’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন পরিচালক মতিন রহমান। ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন রোজিনা, পূর্ণিমা ও ফেরদৌস। এর আগে নজরুলের গল্প ‘জিনের বাদশাহ’ অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন বাপ্পারাজ।

তার ‘লিচু চোর’ এবং ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ কবিতা অবলম্বনে শিশুদের জন্য দুটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে। নজরুলের উপন্যাস ‘মৃত্যুক্ষুধা’ এবং গল্প ‘ব্যথার দান’ ও ‘পদ্মগোখরা’ অবলম্বনেও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।

নাটক-টেলিছবিতেও নজরুলের সাহিত্য সুবাস ছড়িয়েছে। লেটো গানে পালা রচনার মধ্য দিয়ে নজরুলের নাট্য প্রতিভার যাত্রা শুরু হয়। গীত ও নাটের যুগল বন্ধনে দীর্ঘকাল ধরে চর্চিত হয়েছে বাংলা নাটক। এই ধারার আধুনিক রূপায়ন ঘটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর নজরুলের নাটকে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।

বালক কবির হাতে রচিত লেটো গানের পালার আধুনিক রূপায়ন ঘটেছে ‘সেতুবন্ধ’, ‘মধুমালা’ প্রভৃতি নাটক। পূর্ণাঙ্গ নাট্য নিদর্শন হিসেবে তার আলেয়া, ঝিলিমিলি, সেতুবন্ধ, শিল্পী, ভূতের ভয়, মধুমালা, রাক্ষুসী নাটকগুলো উল্লেখ্য।

এলএ/এমকেএইচ