দেশজুড়ে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাল সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ

চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে সিদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহে খাদ্য অধিদফতরের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু মিল মালিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার চাল। তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সবীর নাথ চৌধুরী এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯ উপজেলায় সরকারিভাবে ৩৩ হাজার ৯২৩ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিদ্ধ চাল ২৪ হাজার ৪৩৭ মেট্রিক টন ও আতপ চাল ৯ হাজার ৪৮৬ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি আতপ চাল ৩৫ টাকা এবং সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা দরে সংগ্রহ করতে খাদ্য অধিদফতরের নির্দেশনা রয়েছে। আর ২৬ টাকা দরে ধান সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ১৬৫ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে চাল সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন চাল কলের সঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের চুক্তি সম্পন্ন করে সংগ্রহ অভিযান চলছে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করার নির্দেশনা থাকার পরও বিলম্বে শুরু হয়েছে ধান সংগ্রহ অভিযান।

নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলার সবকটি চাল কলের মাধ্যমে চাল সংগ্রহ করার কথা। সদর উপজেলায় সিদ্ধ চালের কল রয়েছে ১৭টি। এর মধ্যে একটি স্বয়ংক্রিয়। বিজয়নগর উপজেলায় ১২টি চাল কল রয়েছে। তবে কোনো স্বয়ংক্রিয় কল নেই। কসবা উপজেলায় ৩টি চাল কল রয়েছে। এর মধ্যে দুইটি স্বয়ংক্রিয়। আশুগঞ্জ উপজেলার ১৭৯টি চাল কলের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় কল ১১টি। সরাইল উপজেলায় ৩১টি কলের মধ্যে কোনো স্বয়ংক্রিয় কল নেই। নাসিরনগর উপজেলায় একটি চাল কল রয়েছে। তবে নবীনগর, আখাউড়া ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় কোনো সিদ্ধ চালের কল নেই।

অপরদিকে সদর উপজেলায় পাঁচটি আতপ চাল কলের মধ্যে সবকটি আংশিক স্বয়ংক্রিয়। আশুগঞ্জ উপজেলায় ৬৯টি কলের মধ্যে সবকটিই আংশিক স্বয়ংক্রিয়। সরাইল উপজেলায় ছয়টি কলের মধ্যে ছয়টিই আংশিক স্বয়ংক্রিয়। কসবা উপজেলার তিনটি কলের মধ্যে সবগুলোই আংশিক স্বয়ংক্রিয়। তবে নাসিরনগর, বিজয়নগর, বাঞ্ছারামপুর ও আখাউড়া উপজেলায় আতপ চালের কোনো কল নেই।

Advertisement

যেসব উপজেলায় সিদ্ধ ও আতপ চালের কল নেই সেসব উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহের বরাদ্দ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলার নির্দিষ্ট কিছু কল মালিককে দিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে এসব বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে অধিকাংশ চাল কল মালিকরা অভিযোগ করেছেন।

এছাড়াও সবকটি উপজেলার পুরো বরাদ্দের প্রতি কেজি আতপ ও সিদ্ধ চালে স্ব-স্ব উপজেলার খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী ও সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাউছার সজীব ১ টাকা করে কমিশন নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন চাল কল মালিক জানান, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক প্রতি কেজি সিদ্ধ ও আতপ চালে ১ টাকা করে কমিশন নিচ্ছেন। সব চাল কলকে বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি।

যদিও অভিযুক্তরা বলছেন, চাল কল না থাকা উপজেলার বরাদ্দগুলো অন্যান্য উপজেলার স্বয়ংক্রিয় চাল কলগুলোকে সমপরিমাণভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

Advertisement

তবে অধিকাংশ চাল কল মালিকদের অভিযোগ মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলার নির্দিষ্ট কিছু চাল কলকে সব বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মূলত সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাউছার সজীবের মাধ্যমেই ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে রফাদফা হয়ে আসছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাউছার সজীবের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর ও আখাউড়া উপজেলায় কোনো চাল কল নেই। কিন্তু ওই উপজেলাগুলোতে সরকার চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। আমাদের জেলা চাল সংগ্রহ কমিটিতে বিষয়টি উপস্থাপন করার পর স্বয়ংক্রিয় চাল কলগুলোতে ভাগ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। স্বয়ংক্রিয় কলের চাল ভালো এবং সুন্দর। তবে চাল সংগ্রহে কোনো অনিয়ম হয়নি। চাল কল মালিকদের অভিযোগ সত্য নয়।

আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/জেআইএম