জাতীয়

ইফতারের আগে চরম নৈরাজ্যের শিকার ঘরমুখো যাত্রীরা

রমজান মাসে ইফতারের আগ মুহূর্তে যানজট ও গণপরিবহন সঙ্কটসহ নানা কারণে নগরীর সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

Advertisement

শনিবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরতি এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করা হয়।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নগরীতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের প্রায় ৯৭ শতাংশ সিটিং সার্ভিসের নামে দরজা বন্ধ করে যাতায়াত করছে। এতে নগরীর মাঝপথের বিভিন্ন স্টপেজের যাত্রীসাধারণ চরম নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছেন। এসব বাস সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে কোম্পানি নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এতে নিম্ন আয়ের লোকজনের যাতায়াত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, অন্যদিকে নগরীতে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা শতভাগ চুক্তিতে চলাচল করছে। এতে মিটারের প্রায় ৩-৪ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়াও যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৯৩ শতাংশ অটোরিকশা। অনেকটা কাকতালীয় ভাবে চালকের পছন্দের গন্তব্য মিলে গেলে রাজি হয় যাত্রীর গন্তব্যে যেতে। এদিকে কমলাপুর, মগবাজার, শনির আখড়া, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর-১০, মহাখালী, আগারগাঁও, ধানমন্ডি, বনানী, বারিধারাসহ নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকার রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ট্যাক্সিক্যাবের দেখা মেলে না।

Advertisement

এ নৈরাজ্যে যুক্ত হয়েছে রাইড শেয়ারিংয়ের নামে চলাচল করা মোটরবাইকগুলো। বিকেল ৪টার পর থেকে অ্যাপস এর পরিবর্তে খেপে ৩ থেকে ৪ গুণ অতিরিক্ত ভাড়ায় তারা যাত্রীবহন করছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক যাত্রী ছাউনি না থাকায় বা যাত্রী ছাউনিগুলো বেদখলে থাকায় তীব্র গরমে নাজুক পরিস্থিতির মুখে পড়ছে নগরীর রোজাদার যাত্রীসাধারণ। বিশেষত নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের এ পরিস্থিতিতে ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হলেও রাস্তায় কোথাও দাঁড়ানো বা বসে বিশ্রামের সুযোগ মিলছে না।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী সেবা পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির সদস্যরা রমজানের শুরু থেকে যাত্রীসাধারণের কর্মস্থলে যাতায়াত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। এ সময় দেখা গেছে, অফিস ছুটি শেষে ইফতারকে কেন্দ্রকরে ঘরমুখী যাত্রীকে টার্গেট করে নগরীতে চলাচলকারী বাসের প্রায় সবকটি এখন রাতারাতি সিটিং সার্ভিস বনে যায়। এসব বাসগুলো বিশেষত ইফতারের সময় যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দ্রুত গন্তব্যে যাত্রা করে। এ সময়কালে একমাত্র বিআরটিসি ও হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানির বাস লোকাল হিসেবে চলাচল করে। এসব বাসে মাঝপথের যাত্রীরা বাদুরঝোলা হয়ে যাতায়াত করছেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রীসেবা পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির ৩টি টিম গত ৭ দিন নগরীতে উল্লেখিত স্পটে রমজান মাসে যাত্রী ভোগান্তি ও ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ করে। পর্যবেক্ষণকালে উল্লেখিত এলাকায় বাস-মিনিবাস, অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব, রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের যাত্রীসেবা পরিস্থিতি, চালক ও যাত্রীসাধারণের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, পর্যবেক্ষণকালে ৯০ শতাংশ যাত্রী রমজানে গণপরিবহন ব্যবস্থার ওপর তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ৯৫ শতাংশ যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াতে দূর্ভোগের শিকার হন। ৯৮ শতাংশ যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের শিকার হয়। ৬৮ শতাংশ যাত্রী চলন্তবাসে উঠানামা করতে বাধ্য হন। সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও ৩৬ শতাংশ যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য হন। হয়রানির শিকার হলেও অভিযোগ কোথায় করতে হয় জানে না ৯৩ শতাংশ যাত্রী। তবে ৯০ শতাংশ যাত্রী মনে করেন অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না বলেই তারা অভিযোগ করেন না।

Advertisement

এএস/এনডিএস/এমকেএইচ