إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُون অর্থাৎ আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। আল্লাহ তাআলা কুরআনের হিফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন। শিখিয়েছেন কিভাবে কুরআনকে হিফাজত করতে হবে। যা বান্দার জন্য হবে মহা কল্যাণকর কাজ। কিভাবে কুরআন কারিমকে হিফাজত হয়ে আসেছে তার ধারাবিবরণী জাগো নিউজে তুলে ধরা হলো-এক. কুরআনের মতন অর্থাৎ হুবহু ওই শব্দগুলো যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ওহির মাধ্যমে আখেরি নবীর ওজর অবর্তীন করেছেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওহির লেখক কোনো সাহাবির দ্বারা তা লিখিয়ে নিতেন। এরপর সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র যবানে তা শুনতেন এবং মুখস্থ করে ফেলতেন। মুখস্থের ধারাবাহিকতা হাফেজে কুরআনগণের সিনায় বংশানুক্রমে আজও জারি আছে।দুই. আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনের শব্দাবলি যেমন হেফাযত করেছেন, তেমনি এর অর্থ ও মর্ম হেফাযতেরও ব্যবস্থা করেছেন। কারণ শুধু শব্দাবলি সংরক্ষিত থাকাটা যথেষ্ট নয়। অর্থ ও মর্মার্থ হেফাযত না হলে এর বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা অনেকটা অবধারিত। পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের ক্ষেত্রে এমনই হয়েছে। হাদিসের হিফাজত দ্বারা আল্লাহর কালামের অর্থ ও মর্ম সংরক্ষিত হয়ে গেছে।তিন. কুরআনের শব্দ ও অর্থের পাশাপাশি তা যে ভাষায় নাযিল হয়েছে অর্থাৎ আররি ভাষা, তা-ও সংরক্ষিত। এর জন্যও আল্লাহ তাআলা আশ্চর্য ব্যবস্থা করেছেন। ভাষার ইতিহাসে দুনিয়ার কোনো ভাষা তিন চারশ বছরের বেশি টিকে থাকেনি। হয়ত ভাষাটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিংবা অন্য কোনো ভাষার সঙ্গে মিশে গেছে। তাইতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং এবং সাহাবায়ে কেরামের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে আরবী ভাষার বিশুদ্ধতার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।চার. শুধু শব্দ, অর্থ এবং কুরআনি ভাষার হেফাযতের উপরই নির্ভর করা হয়নি; বরং এর প্রায়োগিকরূপ সংরক্ষণেরও পুরোপুরি ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পদ্ধতি হলো- কুরআন যে শব্দে অবতীর্ণ হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মর্মার্থ ওহির আলোকে সাহাবায়ে কেরামকে বুঝিয়েছেন। কুরআনের কোথাও নামাযের পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা নামায আদায় কর এমনভাবে যেমন আমাকে নামায আদায় করতে দেখেছ।’পাঁচ. আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার কিতাব সংরক্ষণের জন্য এমন এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, যে পরিবেশে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল এবং কুরআনের আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার যে প্রেক্ষাপট ছিল সেই পরিবেশ ও প্রেক্ষাপটকে পর্যন্ত অমরত্ব দান করেছেন। হাদীসের বিশাল ভাণ্ডার সেই সম্পূর্ণ পরিবেশ, আমাদের চোখের সামনে মূর্ত করে দিয়েছে। সুতরাং যার হিফাজতের ধারাবাহিকতা থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত।ছয়. কুরআনে কারিম সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনচরিত সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কেননা স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন মোতাবেক আমল করে দেখিয়ে দিয়েছেন, যাতে পরবর্তী কেউ বলতে না পারে যে, কুরআন মোতাবেক আমল করা কঠিন। অতএব আমরা তা করতে পারব না। এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমল করে দেখিয়ে দিয়েছেন।সাত. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র সত্তাকে আল্লাহ তাআলা তার আখেরি কিতাব কুরআন নাজিলের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তাঁর জন্য আখেরি দ্বীন তথা দ্বীনে ইসলামকে নির্বাচন করেছেন। কুরআনের সত্যতা টিকিয়ে রাখার জন্য এবং এর উচ্চ মর্যাদা প্রমাণ করার জন্য যিনি কুরআনের বাহক তার মর্যাদা ও সম্মান অক্ষুণ্ন রাখাও অনিবার্য ছিল। আট. কুরআন নাযিলের সময় তার প্রথম সম্বোধিত এবং প্রথম ধারক ছিলেন হযরত সাহাবায়ে কেরাম। কুরআন হেফাযতের একটি দিক এই যে, সাহাবায়ে কেরামের জীবনচরিতও হেফাযত করা হয়েছে। কুরআনের প্রথম পর্যায়ের ধারক ও আমলকারী প্রায় পনের হাজার পবিত্র সত্তার জীবনচরিত নাম-বংশসহ বিস্তারিতভাবে সংরক্ষিত। আর কুরআনের ওপর আমল করার ক্ষেত্রে এটাকে অত্যন্ত সহায়ক মনে করবে।নয়. সাহাবায়ে কেরাম, যারা কুরআনের শব্দ ও অর্থের পাশাপাশি ব্যক্তি ও সামষ্টিকভাবে আমলকারী ছিলেন, যারা দুনিয়াকে একথা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, কুরআন শুধু আমলযোগ্যই নয়, দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্যের চাবিকাঠি। যা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে-তাবেয়িনদের অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা হেফাজত করেছেন।পরিশেষে...কুরআন সংরক্ষণের জন্য আল্লাহ তাআলা বিস্ময়কর যে ব্যবস্থা করেছেন সেগুলো সংক্ষিপ্তাকারে এখানে আলোকপাত করা হল। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দিন আমরা যেন কুরআনের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারি। আর তিনি যেন আমাদের জাহের ও বাতেনকে কুরআনের চাহিদা মোতাবেক বানিয়ে দেন। আমীন।জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।এমএমএস/আরআইপি
Advertisement