দিনভর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দখলে থাকে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতাল। সকাল থেকেই তারা ওয়ার্ডগুলোতে অবাধ বিচরণ করতে থাকেন। দলে দলে ভাগ হয়ে হাসপাতালের ভেতরে ডাক্তারের চেম্বারের সামনে অবস্থান নিয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানা হেঁচড়া করেন। দেখেন কোন কোম্পানির ওষুধ সেখানে লেখা হয়েছে।
Advertisement
অনেকে আবার রোগীদের বলে দেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথাও। কেউবা নিজেদের মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে বলেন অমুক ক্লিনিকে পরীক্ষা করান। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকে সিস্টারদের কাছে থাকা রোগীদের ফাইল নিয়েও টানাটানি করেন তারা। সিস্টাররাও নির্দিধায় ফাইল দিয়ে দেন তাদের কাছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ওষুধ কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধি অবস্থান করছিলেন। পরিচয় জানতে চাইলে তাদের একজন নিজেকে জিসকা কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। নিজের নাম বলেন বিমল কান্তি পাল। কেন ভেতরে ঢুকেছিলেন জানতে চাইলেই দ্রুত তিনি সটকে পড়েন।
একই সময় হাসপাতালের নিচতলায় বহির্বিভাগের গেটের সামনে অবস্থান করছিলেন আব্দুল আজিজ নামে একজন। তিনি বলেন, কয়েকটি কোম্পানির হয়ে তিনি কাজ করেন। মূলত কোম্পানিগুলোর তথ্য সংগ্রহ করাই তার কাজ।
Advertisement
ওষুধ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নিয়ে রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছিলেন এ্যালকো ফার্মার প্রতিনিধি সুজন। তিনি জানান, কারও সমস্যা সৃষ্টি করছেন না। শুধু ছবি তুলছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অফিস সময়ে হাসপাতালে যাওয়ার নিয়ম না থাকলেও সকাল ১০টার আগেই দলে দলে ভাগ হয়ে সেখানে অবস্থান নিচ্ছেন প্রতিনিধিরা। হাসপাতালের ডাক্তারদের বিভিন্ন কক্ষের সামনের রোগীদের ভিড় থাকার সুযোগ নেন তারা। কক্ষ থেকে রোগী বের হওয়া মাত্রই তাদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে একেকজন টানাটানি শুরু করে দেন। ডাক্তার কোন কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন তা জানার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ আবার একটি ওষুধের বদলে নিজের কোম্পানির ওষুধ কেনার পরামর্শ দেন। কেউ আবার সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়েন ডাক্তারের কক্ষে। রোগী দেখার সময় সেখানে অবস্থান নিয়ে তিনি নিজের কোম্পানির ওষুধ লেখানোর চেষ্টা করেন।
সকাল থেকে জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের চক্ষু কক্ষের সামনে অবস্থান করছিলেন বেশ কয়েকজন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। এ সময় হাসপাতালে রোগীর ভিড় ছিল মারাত্মক। একেকজন রোগী ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হন আর তাদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেন প্রতিনিধিরা। তাদের ছবি ওঠানোর বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকজন দ্রুত সটকে পড়েন। অবস্থান নেন হাসপাতালের মূল ভবনের প্রবেশকক্ষের গেটের সামনে।
ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা শুধু এখানেই নয়, তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে সিস্টারদের কাছ থেকে ফাইল নিয়ে ব্যবস্থাপত্র দেখেন। টানা হেঁচড়াও করেন। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এমন দৌরাত্ম হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। এ অবস্থায় নার্স, ব্রাদাররা যেন অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। রোগীসহ তাদের স্বজনরাও মারাত্মক বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।
Advertisement
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রথীন্দ্র চন্দ্র দেব জানান, অফিস চলাকালীন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে আসা অবৈধ। এটি তারা করতে পারেন না। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে তাদের সমিতিকে অবহিত করা হয়েছে। চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে প্রথমে কয়েকদিন তারা বিরত থাকেন। কিন্তু কয়েকদিন পর আবার হাসপাতালে ছুটে আসেন। তবে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এফএ/জেআইএম