দেশজুড়ে

সিডরে গেছে বড় ছেলে, ফণী কাড়ল মা আর ছোট ছেলেকে

বড় ছেলেকে কেড়ে নিয়েছে সিডর। এরপর অভাব অনটন আর ছেলে হারানোর যন্ত্রণা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন স্ত্রী। আর রোগে ভুগে মৃত্যু হয় বাবা আ. বারেকের। এবার মা আর ছোট ছেলেকে কেড়ে নিল ফণী। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের দরিদ্র জেলে ইব্রাহিমের জীবনের নির্মম গল্প এটি। অন্যের ট্রলারে মাছ ধরে শ্রমিকের জীবন ইব্রাহীমের। স্ত্রী সন্তান আর বাবা-মাকে নিয়ে ভালোই কাটছিল তার। ২০০৭ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর যখন উপকূলে আঘাত হানে তখনও জীবিকার তাগিদে ট্রলারেই ছিলেন ইব্রাহীম।

Advertisement

এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় জলোচ্ছ্বাসের প্রবল তোড়ে স্ত্রী জেসমিনের কোল থেকে ছিটকে পড়ে মৃত্যু হয় বড় ছেলে রবিউলের। চোখের সামনে নিজের কোল থেকে ছিটকে পড়ে সন্তানের মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন জেসমিন।

সিডরের বছর দুই পর জেসিমিনের কোলে জন্ম নেয় জাহিদুল। এরপর অভাবের সংসারের দৈনন্দিন যাতনা আর বৌ-শাশুড়ির ঝগড়ার এক পর্যায়ে বছর তিনেক আগে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন স্ত্রী জেসমিন।

ছোট ছেলে জাহিদুল আর মেয়ে জান্নাতিকে নিয়ে একরকম চলছিল ইব্রাহীমের। এরইমধ্যে রোগে ভুগে স্ট্রোক করে মৃত্যু হয় বাবা আ. বারেকের।

Advertisement

সর্বশেষ গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ঘরচাপা পড়ে মৃতু হয় মা নূরজাহান বেগম এবং ছোট ছেলে জাহিদুলের।

ইব্রাহীম জানান, স্ত্রী জেসমিনের আত্মহত্যার দুই বছর পর আবার বিয়ে করেন তিনি। ছোট ছেলে জাহিদুল থাকতো পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় তার বড় বোন রাহিলার বাড়িতে। শুক্রবার সকালে রাহিলা জাহিদুলকে নিয়ে বেড়াতে আসে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সবাই মিলে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইলেও বৃদ্ধা মা নূরজাহান রাজি না হওয়ায় সবাই থেকে যান বাড়িতে। রাত ৩টার দিকে প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে হঠাৎ ঘর ভেঙে পড়লে তার নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় বৃদ্ধা মা আর ছোট ছেলের।

এ ঘটনায় শনিবার সকালে ইব্রাহীমের বাড়ি পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন। সে সময় তিনি জেলা প্রশানের পক্ষ থেকে ইব্রাহীমকে ৪০ হাজার টাকার সহযোগিতা দেন।

জাকির হোসেন বলেন, ইব্রাহীমের জীবন বড়ই দুঃখের। ইব্রাহীম যাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে আরও সহযোগিতা পায় সে বিষয়ে তিনি সচেষ্ট থাকবেন।

Advertisement

এফএ/এমএস