প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে বইছে ঝড়ো হাওয়া। সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নে চোরামনকাটি গ্রামে ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে শাহানুর বেগম (৩৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। তিনি ওই গ্রামের মোজাহারের স্ত্রী।
Advertisement
দুপুরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে ঝড়ো হাওয়ায় তার ওপর গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। পরে তাকে আহত অবস্থায় রামপাল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি মারা যান।
এদিকে সিডর বিধ্বস্ত শরণখোলার বলেশ্বর নদী পাড়ের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। শুক্রবার সকাল থেকে উপকূল জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। দুপুরের পর থেকে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় উপকূলের মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়ে সরে যেতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। শুক্রবার মধ্যরাতে এ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানবে বলে সতর্ক করছে তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বাগেরহাট জেলার ২৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। জুমার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশ উপকূল ভাগে আঘাত হানলে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের অসংখ্য বন্যপ্রাণির ক্ষতি হবার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের দুর্গম শ্যালা ও কোকিল মনি ফরেস্ট ক্যাম্পের সকলকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।
Advertisement
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হাসান মাহমুল জানান, জানমাল ও সরকারি সম্পদের বিষয়টি বিবেচনা করে বন বিভাগ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সুন্দরবনে একটি বিরাট অংশ। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে মারা যায় একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, অসংখ হরিণসহ অনেক বন্যপ্রাণী। আবহাওয়া বিভাগ এবারও প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দেয়ায় সুন্দরবনের অসংখ্য বন্যপ্রাণি মারা যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, এখনই বলা যাবে না এবারের ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণি মারা যাবে। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বড় ধরনের ক্ষতি না হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল-মায়া হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণিকূলের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না বলে আশা রাখি। তবে ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবনে সরাসরি আঘাত হানলে বন্যপ্রাণির ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় ফণীতে ক্ষতির আশঙ্কায় প্রায় ৪শ মেট্রিকটন চাল ও ৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার মজুত রাখা হয়েছে । সাইক্লোন শেল্টারের পাশাপাশি উপকূলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার নুরুল হুদা শুক্রবার দুপুরে জানান, বন্দরে ৩ নম্বর রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। বন্দরে অবস্থানরত ১৬টি বিদেশি জাহাজ নিরাপদে রয়েছে।
Advertisement
শওকত বাবু/আরএআর/এমএস